ফতুল্লায় ডিবি পরিচয়ে হামলার ঘটনায় রহস্যের ধুম্রজাল!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: ফতুল্লার লালপুর এলাকায় চাঁদ নীট কম্পোজিটে চাঁদার দাবীতে হামলা এবং পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা নিয়ে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে এনে গত শুক্রবার (১৮ মার্চ) শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, সুলতান মাহমুদ ও মীর সাজু নামে তিনজনকে আটক করে ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল ডাইং কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও দায়ের করা হয়। তবে একই ঘটনায় আগের মামলার বিবাদীরা বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। দুই পক্ষের দুই রকম বক্তব্যে রহস্যের সৃৃষ্টি হয়েছে জনমনে। তাই সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের করে আনতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

রহস্য আরো ঘনিভূত হয়েছে ডিবি পুলিশের সেখানে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায়। ডিবি পুলিশের যে গাড়িটি সেখানে দেখা গেছে তা কোন ভূয়া ডিবি পুলিশের ছিলো না বরং নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) গাড়ি ছিলো এবং সেখানে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার দুইজন অফিসারও গাড়িতে অবস্থান করছিলো বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিসি টিভির ফুটেজে ডিবি পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িটি নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বলে নিশ্চিত করেছে কতৃপক্ষ। ঐ গাড়িতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক তারেক ও উপ পরিদর্শক কায়েসের নেতৃত্ব ডিবি পুলিশের একটি টিম ছিল।

এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জায়েদ পারভেজ নারায়ণগঞ্জ মেইলকে জানান, ডাইংয়ের ঘটনায় আমরা সেখানে যাইনি বা যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে ডিবির টিম সেখানে গিয়েছিল।

এব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক তারেক জানান, ডাইংয়ের ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। আমরা অন্য একটি অভিযানে গিয়েছিলাম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদ নীট কম্পোজিটের মালিক দাবিদার জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনির সাথে ডাইংয়ের মালিকানা নিয়ে শাহদাত হোসেন বাচ্চুর বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের অংশ হিসেবে শুক্রবার বাচ্চুর সাথে জনির তর্ক হয়। তর্কাতর্কির এক পর্র্যায়ে মোল্লা জনির সহযোগী কামরুল হাসান মাসুম ও তার বাহিনীর সদস্যরা তিনজনকে ধরে নিয়ে চার ঘন্টা নির্যাতনের পর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ এই তিনজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। একই সাথে মোল্লা জনি ও মাসুম বাহিনীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাচ্চুর স্ত্রী শাহানজ পারভীন জানান, চাঁদ নীট কম্পোজিটের মালিক সোহেল নামে এক ব্যক্তি। সোহেলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর কাছ থেকে ভাড়া দিলেও মোল্লা জনি ধীরে ধীরে ফ্যাক্টরির চারদিকের জমি দখল করতে থাকে। আমার স্বামী বাচ্চুসহ অনেকের জায়গা দখল করেছে। এনিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে শুক্রবার করব জিয়ারতে যাওয়ার পথে তাদের ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে নির্যাতন চালিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আমি পুলিশের কাছে অনুরোধ করব সর্ম্পূণ ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করলে আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। আমরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবার। আমরা কেন চাঁদা চাইলে যাবো।
বাচ্চুর পুত্র বাপ্পি জানান, সময় টিভিতে যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তার একাংশে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাসুম, জনি ও তার বাহিনীর সদস্যরা আমার মামা সুলতান মাহমুদকে ধরে নিয়ে মারধর করছে।

এদিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে আরো জানা গেছে, ফ্যাক্টরীতে প্রবেশ করে মেশিনারিজ ভাংচুরের দায়ে জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনি গংদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে চলতি মাসের ৬ তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন শাহাদাত হোসেন বাচ্চু। এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারী মোল্লা জনিগংদের বিরুদ্ধে একই ব্যক্তি ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরীও করেন যার নং ৫৪০। এর আগে গত ১০ জানুয়ারী জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম জনিগংদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে একটি ঘোষনামুলক দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করেছিলেন মো.শাহাদাত হোসেন বাচ্চু। যার দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ২৬/২২ইং এবং ২৪ জানুয়ারী একই ব্যক্তি বাদী হয়ে বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি অস্থায়ী অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন যার দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ২৬/২২ইং। এরই জের ধরে শুক্রবার বাচ্চুসহ তিনজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় বলে বাচ্চুর পরিবারের দাবী।

সূত্রে আরো জানা গেছে, জনির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ভূমিদস্যুতাসহ বিভিন্ন অপকর্মের আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল শিবু মার্কেট এলাকার আব্দুস সামাদের পুত্র কামাল হোসেনকে পিটিয়ে দুই হাত ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় ওই মাসের ১৫ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয় জনি, মাসুমসহ বেশ কয়েজনের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে আহত কামাল হোসেনের বাড়িতে জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনির সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। তারা মামলা তুলে না নিলে বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তিতে চাপের মুখে পড়ে সেই মামলাও তুলে নিয়েছিল আহত কামাল। এছাড়াও ২ কোটি টাকা বকেয়ার দায়ে চাঁদ নীট কম্পোজিট ইউনিট টু এর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মালিক জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনির সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ ও লাঞ্চিত হয়েছিলো তিতাসের কর্মকর্তারা। এছাড়া এ জনির বিরুদ্ধেও সংবাদ সম্মেলন হয়। ফতুল্লায় এস বি নিট কম্পোজিট প্রতিষ্ঠান (কারখানা) ও ৭১ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এতো অভিযোগ থাকার পরও প্রভাবশালী মহলের শেল্টারে বহাল তবিয়তে রয়েছে জনি ওরফে মোল্লা জনি। আর মোল্লা জনি হাতিয়ার হিবেসে কামরুল হাসান মাসুমসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনির মোইল নাম্বারে (০১৯৫৪৭৬৯০৯০) একাধীকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

দুই পক্ষের মামলার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জ মেইলকে জানিয়েছেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। অন্যায়কারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ