নারায়ণগঞ্জ মেইল: গত ১৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যের মূল কারিগর হিসেবে উঠে এসেছে সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমানের সমন্ধি ভিকি ও তার চাচাতো ভাই নেছার এবং স্থানীয় কিশোর গ্যাং লিডার অমিও’র নাম। অথচ এই তিন মাস্টারমাইন্ডকেই মামলার আসামি করা হয়নি যা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মনে। কোন্ অদৃশ্য ইশারায় প্রকৃত আসামিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে নিরীহ মানুষজনকে গ্রেপ্তার করে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে পুলিশ- সেই প্রশ্ন এখন সকলের মুখে মুখে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৯ আগস্ট শনিবার রাত ৯ টায় ১৩ নং ওয়ার্ডের তালা ফ্যাক্টরির মোড় এবং ঈদগাহ মাঠের সামনে তান্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় পথচারী, দোকানদার, পুলিশ সদস্যসহ ১২জন আহত হয়। এছাড়াও অন্তত ১৮টি দোকান ভাংচূর করে সন্ত্রাসীরা।
১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল আহসানের অনুসারী কিশোর গ্যাং লিডার জুবায়ের আহম্মেদ অমিও গ্রুপের সদস্যদের খোঁজ করতে এসেছিল মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার নেছার ও সাব্বির গ্রুপের লোকজন। তবে অমিও গ্রুপকে না পেয়ে সড়কে মহড়া দিয়ে চলে যাওয়ার সময় তালা ফ্যাক্টরির সামনে বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে তারা। মহড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে গেলে সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াতে আসা রূপগঞ্জের এক পুলিশ সদস্য তাদের ভিডিও করেন। এ সময় সেই পুলিশ সদস্য ও পাশের এক মুদি দোকানীকে কুপিয়ে যখম করে সন্ত্রাসীরা। মহড়া দেয়ার সময় রাস্তায় পথচারী যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়ে আহত করেছে নেছার ও সাব্বিরের সন্ত্রাসী গ্রুপ। সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত অটোচালক শিবলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শিদের তথ্য অনুযায়ী অনুসন্ধানে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের সম্বন্ধী ভিকি বাহিনীর সদস্য নেছার ও সাব্বিরের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। এরআগে ভিকি নির্দেশে নেছার-সাব্বির ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন, চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্ম করে আসছিলো।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের সরাসরি শেল্টারে রয়েছে সন্ত্রাসী নেছার। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে সন্ত্রাসী নেছার ও তার বাহিনীর সদস্যরা অয়ন ওসমানের সাথে দেখা করে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছে।
সর্বশেষ ১৯ আগষ্ট ভিকির নির্দেশে আধিপত্য বিস্তার ও শক্তির জানান দিতে এই হামলা চালিয়েছে নেছার-সাব্বির গ্রুপ। নেছার-সাব্বির গ্রুপের সাথে স্থানীয় অমিও গ্রুপের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এর আগেও কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনার ঘটেছে। ১৯ আগস্টের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৩ জনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল হোতা ভিকি, নেছার ও অমিওকে মামলার আসামি করা হয়নি অথচ এই মামলায় এমন অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের সাথে এই ঘটনার সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি স্থানীয়দের। আর তাই প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে মূল অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি মাসদাইরবাসীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৯ আগস্ট আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। নিজেদের সংঘর্ষের ঘটনা তারা বিএনপি’র ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে যা দেখে আমরা সাধারণ মানুষ খুব অবাক হয়েছি। তাছাড়া যাদের নেতৃত্বে সংঘর্ষ হয়েছে তাদেরকেই মামলার আসামি করা হয়নি বরং নিরীহ অনেক মানুষকে ধরে নিয়ে চালান করে দেয়া হয়েছে।
অপর এক এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় গ্যাং লিডার অমিও এমপি শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান এবং তোলারাম কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদের শেল্টারে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। কিছুদিন পর পরই বিভিন্ন গ্রুপের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনার ঘটে। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারি না। গত ১৯ শে আগস্টের ঘটনায় মারামারি করেছে সন্ত্রাসী দুটি গ্রুপ অথচ ভুক্তভোগী হয়েছে নিরীহ মাসদাইরের জনগণ। এলাকার দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে, নিরীহ মানুষজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গরিব অটোচালক শিবলীকে নির্মমভাবে কোপানো হয়েছে। সে এখন তার দুটি চোখ হারিয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।