‘শহরে নিষিদ্ধ ইজিবাইক’ নেপথ্যে অর্ধকোটি টাকার চাঁদাবাজী

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ শহরে যানজটের অন্যমত কারণ ব্যাটারি চালিত রিক্সা, মিশুক ও ইজিবাইক চলাচল। শহরে ব্যাটারি চালিত এসকল যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তিন সিন্ডিকেটের মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজীর কারণে তা অবাধে চলাচল করছে। জেলা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে ২০১২ সালে প্রথম শহরের প্রধান প্রধান সড়কে ব্যাটারি চালিত যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান শহরের প্রধান সড়কগুলো ব্যাটারি চালিত এসকল অবৈধ যানের দখলে চলে গেছে। কতিপয় শ্রমিক নেতা, অসাধু ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও নামধারী সাংবাদিক- এই সিন্ডিকেট মিলে ব্যাটারি চালিত যান থেকে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরে প্রতিদিন শতাধিক ব্যাটারি চালিত রিক্সা আটক করে রেকার বিল বাবদ এক হাজার করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট স্টিকার ব্যবহার করলে সেই সব যান আটক করে না ট্রাফিক পুলিশ। কয়েকশ ইজিবাইক চালক চাষাঢ়া থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ, সাইনবোর্ড ও পঞ্চবটি রুটে চলাচল করছে। প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পরেও কিভাবে শহরে ঢুকেন জানতে চাইলে অটোচালক সবুজ বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিয়ে ঢুকতে হয়। দুই শিফটে ৫০ টাকা করে মোট ১০০ টাকা দিয়ে শহরে প্রবেশ করেন তারা। আর এই টাকা উঠানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে লোক দেয়া হয়েছে। অন্য লাইনের গাড়ি আসলে তাদের শহরে প্রবেশ করলে রেকার বিল আদায় করা হয়।

ফতুল্লার সড়কে ব্যাটারি চালিত যান চলাচল করতে হলে চাঁদা দিতে হয় কথিত শ্রমিক নেতা আজিজুলকে। আজিজুলের কাছে ইজিবাইক, ব্যাটারী যুক্ত রিক্সা ও মিশুক পরিবহনের মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। আজিজুলকে চাঁদা না দিলেও গাড়ি আটকে রেখে চালককে মারধরসহ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় অটো রিক্সা ছেড়ে দিলে রিক্সার বসার গদি রেখে দেয় আজিজুল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদার বিনিময়ে একটি প্লেট দেয় আজিজুল। আজিজুলের প্লেট থাকলে তা আটক করে না ট্রাফিক পুলিশ। চাঁদাবাজীর বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন আজিজুর।

এছাড়াও পঞ্চবটিতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা আটক করে রেকার বিল ছাড়াই আটশ করে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপ পরিদর্শক মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। আজিজুলের প্লেটবিহীন গাড়ি আটক করে দৈনিক বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মাহমুদুল হাসান।

শহরে চলাচলরত ব্যাটারি চালিত যানে সংবাদ মাধ্যমের স্টিকার দেখা যায়। এই স্টিকার থাকা যান আটক কওে না ট্রাফিক পুলিশ। এই স্টিকার বাবদ প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসে ১৫শ করে টাকা নিচ্ছে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার স্টিকার বিতরণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে খানপুর হাসপাতাল পর্যন্ত ও পঞ্চবটি থেকে অট্টো অফিস পর্যন্ত ইজিবাইক চলাচল করার কথা থাকলেও তা নির্বিঘ্নে ঢুকে পরছে শহরে। আর এ কাজে তাদের সহায়তা করছে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন টাকা নিয়ে অবৈধ ইজিবাইককে শহরে প্রবেশাধীকার দিচ্ছেন এই অসাধু পুলিশ সদস্যরা। তাদের এই কাজে সহযোগী হিসেবে রয়েছে শহরের কয়েকজন লোক।

এব্যাপারে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সোহান সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হওে তিনি নারাায়ণগঞ্জ ম্ইেলকে জানান, প্রতিদিন প্রায় ৩০/৪০টি ব্যাটারি চালিত রিক্সা আটক করা হচ্ছে।
তবুও কেন শহরে নির্বিঘ্নে ইজিবাইক চলাচল করছে এমন প্রশ্নের জবাবে সোহান সরকার জানান, আমরা আরো কঠোর হবো। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বিকার কওে বলেন, এমন হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ