নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। যখন নারায়ণগঞ্জে এই ঘটনাটি ঘটেছিল তখন গডফাদারদের রাজত্ব ছিল। সেই সময় নারায়ণগঞ্জে আইনের কোন শাসন ছিল না। সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে তৎকালীন সাংসদ গডফাদার শামীম ওসমান ও তার দোসর নূর হোসেন বাংলাদেশের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে আইনজীবী চন্দন সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে হাজার হাজার মানুষের সামনে থেকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার ১১ বছর পূর্তিতে মামলার রায় অবিলম্বে কার্যকরের দাবিতে আইনজীবী সমাজ , নিহতের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার ( ২৭ এপ্রিল) সকাল দশটায় নারায়ণগঞ্জের আদালত পাড়ায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এডভোকেট সাখাওয়াত বলেন, সেই কলঙ্কিত সাত খুনের আজ এগারো বছর পার হলো। ১১ বছর আগে যখন এই নৃশংস ঘটনা ঘটে তখন আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলাম। যখন আমি শুনেছি তখনই আমি আইনজীবীদের নিয়ে তৎকালীন এসপি নুরুল ইসলামের অফিস ঘেরাও করে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা র্যাব অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, থানায় যোগাযোগ করেছিলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছিলাম। আমরা ফ্যাসিস শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। সে সময় তারা উল্টো আমাদেরকে দোষারোপ করেছিল যে আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম এই সাতটি তাজা মানুষকে জীবন্ত উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু এর তিনদিন পর আমরা কি দেখলাম ওই শীতলক্ষা নদীতে এদের লাশ ভেসে উঠলো। তাদের প্রত্যেকটির পিঠের মধ্যে ২৪টি করে ইট বাধা ছিল। তাদের লাশের বিব্রত চিত্র দেখে শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বিশ্বের মানুষ কেঁদেছিল এবং শোকাহত হয়েছিল। সেদিন সারা বাংলাদেশসহ নারায়ণগঞ্জের মানুষ ও আইনজীবীরা প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল। নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা টানা ৫৮ দিন আদালত বর্জন করেছিল। তারপর ওই সরকার মামলাটিকে অন্য ক্ষেত্ররে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল।
তিনি আরো বলেন, আমি নিজে বাদী হয়ে ও এডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বাদী হয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করি। সেই রিটপটিশন আমাদের পক্ষে আসে এরপর আসামিদেরকে একে একে গ্রেফতার করা হয়। এবং আদালতে তারা তাদের দোষ স্বীকার করে তাদেরকে কিভাবে গুন ও খুন করা হয়েছিল। এই নারায়ণগঞ্জের আদালতে সেদিন আমরা সুবিচার পেয়েছিলাম। এরপর তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিলে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং ১১জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এবং অন্যান্যদেরকে বিভিন্ন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিল।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন এ আসামিরা অন্তত প্রভাবশালী। ওই তারেক সাইদ হলো মোফাজ্জল হোসেন মায়ার মেয়ের জামাতা। এবং অন্য অন্যরা আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ছিল। তারা উচ্চ আদালতে মামলাকে ভিন্ন খেতে প্রবাহিত করে । আজকে ৫-৬ বছর হয়ে গেল এই মামলার এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আপিল অ্যাপিলেশনে সে মামলাটি দীর্ঘস্থায়ী করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই ৫ই আগস্ট এর মাধ্যমে ওই ফ্যাসিদের পতন হয়েছে। ছাত্র- জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে অন্তবর্তী সরকার গঠন হয়েছে সেই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আপিল অ্যাপিলেশন ডিভিশনের মাধ্যমে আপনারা মামলাটিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করুন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সোনানীর মাধ্যমে এ রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করবেন। এই কার্যকরের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারদের যে দাবি তা পূর্ণ করবেন। এই ঘটনার যদি বিচার হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর পুনরাবৃত্তি হবে না। নারায়ণগঞ্জের ত্বকীসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।