নারায়ণগঞ্জ মেইল: প্রতারণা, দুর্নীতি, অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি স্বঘোষিত মজলুম নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। বাণিজ্য করেছেন নিজ ভাইয়ের হত্যা মামলা নিয়েও।
বিভিন্ন সময় অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এক সময়ের বিএনপির দাপুটে নেতা তৈমূর আলম এখন ব্যস্ত রয়েছেন রিট-বাণিজ্য নিয়ে। তার কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি হয়েছে কোণঠাসা। জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির পর পদ বাগাতে আবারও সরব হয়েছেন দুর্নীতির এ বরপুত্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, বিআরটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিআরটিসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় মূলত অথর্ব প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ পরিবহন সংস্থাটি। তিনি টাকার বিনিময়ে সরকারের কেনা কোটি কোটি টাকার বাস-গাড়ি পছন্দের মহাজনদের লিজ প্রদানের মাধ্যমে বিআরটিসিকে করে ফেলেন সম্পদশূন্য।
এছাড়া সম্পূর্ণ বেআইনিভবে বিআরটিসিতে ৫৩৭ জন অদক্ষ্য লোক নিয়োগের মাধ্যমে সে সময় দেশব্যাপী শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে আলোচনায় আসেন তৈমূর। শোনা যায় অবৈধ এ নিয়োগের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্য করেছেন তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তৈমূর আলম খন্দকার। দায়িত্ব পালনকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর স্ত্রী জোছনে আরা চৌধুরীকে অন্ধ ও বধির সংস্থার ১১টি দোকান বরাদ্দ দেন তিনি।
বধির সংস্থার তহবিল তসরুপ করে অন্যদের সহায়তায় প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তৈমূরের বিরুদ্ধে। পৃথক ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ করায় বধিররা রাস্তায় নেমে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বধির সংস্থার নির্বাচনে বিপুল ভরাডুবি ঘটে তৈমূরের। অভিযোগ আছে, দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতির দায়িত্বপালনকালেও জেলা-উপজেলার বিভিন্ন নেতা-কর্মীকে পদ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এ মজলুম নেতা। তার ভাই প্রয়াত সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যা মামলা নিয়েও আসামিদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায় করেছেন তিনি।
বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার। তার নিজ জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে রয়েছে অঢেল জমিজামা। নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর ও রাজধানীর লালমাটিয়ায় নিজ নামে ১৭ শতাংশ জমিতে ছয় বাড়ি এবং রাজউকের কাছ থেকে পাওয়া পাঁচ কাঠার একটি প্লট। তার স্ত্রীর হালিমা ফারজানার নামে ঢাকার তোপখানা রোডে মেহেরবা প্লাজা ও সেগুনবাগিচায় তিনটি ফ্ল্যাট ও ফতুল্লার বিসিক এলাকায় প্লট। স্টেডিয়াম মার্কেট, জোয়ার সাহারাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে দোকান ও ফ্ল্যাট।
এসব কারণে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতির মামলা হয়েছে। এছাড়া হত্যা, বিস্ফোরণ, রাহাজানি দস্যুতার অসংখ্য মামলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায়। মেয়ে ব্যারিস্টার মারিয়াম খন্দকার আর চতুর আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার মামলাগুলো সুকৌশলে ঢেকে রেখেছেন। বর্তমানে নয়টি মামলা থাকলেও এর মধ্যে তিনটি মামলায় নিম্ন আদালতে তার সাজা হলে হাই কোর্টের আদেশে তা স্থগিত আছে। বাকি ছয়টি মামলার কার্যক্রমের ওপরও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকাকালীন তৈমূর আলম স্বজনপ্রীতি, অযোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন, পদের লোভ দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা কারণে ছিলেন সমালোচিত।
এ কারণে পরবর্তী কমিটিতে স্থান হয়নি তার। জেলা বিএনপি তখন থেকেই কাজী মনিরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, গিয়াসউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। একেবারেই কর্মীশূন্য তৈমূর বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় পদ বাগাতে আবারও দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। তবে তাকে নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন জেলা বিএনপির বর্তমান কা ারিরা।
তাদের ধারণা, বিএনপি সর্বদা কাজের মূল্যায়ন করে থাকে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিকে কোণঠাসা করা তৈমূর কখনোই আর স্বপদে ফিরতে পারবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈমূর আলম খন্দকার দাবি করেন, এক-এগারোর পর তারেক রহমানের মামলার আইনজীবী ছিলাম আমি। এ কারণেই ওই সময়ের সরকার গ্রেফতার করে আমার বিরুদ্ধে এসব মামলা দিয়েছে। এসব মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সূত্র: নিউজ টুয়েন্টিফোর অনলাইন
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০