নারায়ণগঞ্জ মেইল: শেষ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কেনা বেচা। ১৫ ডিসেম্বর বুধবার ছিলো মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। এদিন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীর বিপরীতে বিএনপি’র একটিমাত্র মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। সেটি হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের। যদিও বিএনপি দলীয়ভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের সেই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে মনোনয়নপত্র কেনা বিএনপির চার প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়ে গিয়েছেন। আর এটাকে কোনভাবেই ভালো চোখে দেখছে না নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের মতে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনের মাঠে থেকে যাওয়াটা তৈমুর আলম খন্দকারের দলের সাথে বেইমানি করার শামিল।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দলীয় সমর্থনে সেবার মেয়র পদে প্রার্থী হন তৈমুর। কিন্তু নাটকীয় ভাবে নির্বাচনের আগের রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। গণমাধ্যমকে সে সময় তৈমুর জানিয়েছিলেন দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে তাকে নির্বাচন থেকে সরে আসতে হয়েছে এবং এটাকে তিনি নিজেকে কোরবানি করে ফেলার সাথে তুলনা করে বলেন, আমাকে বিনা গোসলে কোরবানি করে দেয়া হলো।
প্রথম নির্বাচনে পাওয়া আঘাত তৈমুর ভুলতে পারেননি। তাই ২০১৬ সালে দলীয়ভাবে তাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি প্রার্থী হতে রাজি হননি। সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন আমি বিনা গোসলে আর কোরবানি হতে চাই না।
বিনার গোসলে কোরবানি হওয়ার ভয় পুরোপুরি কেটে যায় তৈমুরের ২০২১ সালে এসে। এবার তৈমুর বীরদর্পে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েন অথচ তখন দলীয়ভাবে সারাদেশের সকল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দল যখন নির্বাচনের জন্য তাকে ডেকেছিলো, তখন তিনি না করে দিয়েছিলেন অথচ যখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার, তখনই নির্বাচনের জন্য তৈমুরের এই অতি উৎসাহ সন্দেহের জন্ম দিয়েছে সমালোচকদের মনে। অনেক মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের কোনো এক প্রভাবশালী পরিবারের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য তৈমুর প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে মেয়র পদে লড়তে প্রস্তুত হচ্ছেন তৈমুর।
নির্বাচনের জন্য মরিয়া তৈমুরের আচরণে হতাশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে নেতাকর্মীদের মাঝে একটি গুঞ্জন গত কয়েকদিন যাবত ভেসে বেড়াচ্ছে আর তা হচ্ছে, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে একটি প্রভাবশালী পরিবারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তৈমুর, যেটা বরাবর নির্বাচন এলেই তিনি করে থাকেন। এবার সেই পরিবার থেকে শর্ত দেয়া হয়েছে ছোট ভাইকে পাস করাতে হলে তৈমুরকে মেয়র পদে নির্বাচন করতে হবে। ছোট ভাইকে বিজয়ী করতে এবার নিজে কোরবানি হচ্ছেন তৈমুর আর দলের সাথে করছেন বেইমানি- এমনটাই জানা গেছে বিএনপির তৃনমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে।
নেতাকর্মীদের মাঝে চলমান এই গুঞ্জনের কারণ হিসেবে জানা গেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বর্তমানে চরম বেকায়দায় রয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে তার মানবতার ফেরিওয়ালা সাজার জন্য তার ফটোসেশনের গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। সেই সাথে বর্তমানে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আর ধর্ষন মামলার আসামি হয়ে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই খোরশেদকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে তার বড় ভাই অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার দলের সাথে এই চরম বেঈমানি করছেন বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।