নারায়ণগঞ্জ মেইল: ২০১৬ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে এবং পরে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর হিসেবে সেটি তার শেষ নির্বাচন । তিনি আর এ পদে নির্বাচন করবেন না। এমনকি স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাযের পূর্বে দাঁড়িয়েও এলাকাবাসীর কাছে একই ওয়াদা করেছিলেন তিনি। মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর, মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। সে আল্লাহর ঘরে দাঁড়িয়ে ওয়াদা করেছিলেন খোরশেদ ১৩ নং ওয়ার্ডে আর নির্বাচন করবেন না কাউন্সিলর পদে কিন্তু আল্লাহর ঘর মসজিদে দাঁড়িয়ে সেদিন যে ওয়াদা করেছিলেন খোরশেদ, পাঁচ বছর পর এসে সেই ওয়াদাই ভঙ্গ করেছেন তিনি- এমনটাই জানিয়েছেন ১৩ নং ওয়ার্ডবাসী। কারণ ইতিমধ্যেই তিনি আবারও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, আমি মসজিদে দাঁড়িয়ে ওয়াদা করেছিলাম ঠিকই কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছরে আমার কাজগুলো সব শেষ করতে পারিনি। সেই অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য আমি আরেকবার নির্বাচন করতে চাই।
জানা যায়, ২০০৩ সালে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে নির্বাচন করেন বিএনপি নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং বিজয়ী হন। এরপর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ভেঙে তৈরি হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম এবং দ্বিতীয় নির্বাচনেও ১৩ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন এবং সরকারি দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে পিছনে ফেলে বিজয়ী হন। অবশ্য সে বিজয়ের পেছনে সরকারি দলের একটি প্রভাবশালী মহলের সবুজ সংকেতের তথ্যও পাওয়া যায় লোকমুখে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পূর্বে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর পদে এটাই তার শেষ নির্বাচন। এরপর আর তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন না। কাউন্সিলর খোরশেদের নিজ এলাকা মাসদাইরের বায়তুল আমান জামে মসজিদে দাঁড়িয়ে জুমার নামাযের পূর্বে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, “কাউন্সিলর পদে এটাই আমার শেষ নির্বাচন। শেষবারের মতো আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন”। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরেও একই মসজিদে জুমার নামাজের পরে দাঁড়িয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেছিলেন, “আমি কাউন্সিলর পদে আর নির্বাচন করবো না। এতদিন ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলো আপনাদের এলাকায়। আগামীতেও যাতে এলাকার কেউ কাউন্সিলর হতে পারে সে লক্ষ্যে আপনারা প্রস্তুতি নিন এবং দক্ষ কাউকে মনোনীত করুন যাতে আমি আগামী দিনের কাউন্সিলর হিসেবে তাকে গড়ে তুলতে পারি”।
কাউন্সিলর খোরশেদের এ ঘোষণায় সবাই সেসময় মনে করেছিলো হয়তো মেয়র পদে নির্বাচনের ইচ্ছা আছে খোরশেদের। সর্বশেষ করোনার গত দেড় বছরে জনস্বার্থে খোরশেদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড লোকের সে ভাবনাকে আরও মজবুত করেছিল। হয়তো সবাই মনে করেছিলো ধীরে ধীরে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দিকে খোরশেদ এড়িয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু বিধিবাম! খোরশেদের মেয়র পদে নির্বাচনের আশা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায়। জনৈক সায়েদা শিউলি নামক এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় খোরশেদের ইমেজ কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে আসে। শিউলির দায়ের করা মামলার আসামী হয়ে দু মাস যাবত ফেরারী খোরশেদ হয়ে পড়েছেন জনবিচ্ছিন্ন। ফলে মেয়র নির্বাচনতো দূরে থাক, কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াটাই এখন খোরশেদের জন্য দুরূহ হয়ে গেছে। তাছাড়া বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না- এরকম ঘোষণায় খোরশেদের মেয়র নির্বাচনের স্বপ্নটাও ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন না আর মেয়র পদেও করতে পারছেন না। তাই নারায়ণগঞ্জবাসীর কৌতুহল “তাহলে কি করবেন খোরশেদ”, তাহলে কি “ওয়াদা ভঙ্গকারি” খেতাব নিতে চাইছেন তিনি!