নারায়ণগঞ্জ মেইল: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রতিবাদে উত্তাল। প্রায় প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জের কোথাও না কোথাও নানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা। মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদানসহ একের পর এক কর্মসূচিতে দলীয় সভানেত্রীর মুক্তি দাবি করছেন তারা।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিতর্কিত নেতা নজরুল ইসলাম আজাদকে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে কখনই দেখা যায়না। এমনকি বর্তমানে চলমান আন্দোলনেও তিনি কোনদিন শরিক হননি। বুধবার বিএনপি নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করে চলে যাওয়ার পরে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে আসেন নজরুল ইসলাম আজাদ। এসময় আজাদ অনুসারী কয়েকজন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে দাঁড়িয়ে ফটোসেশন করে চলে যান তিনি। এসব দেখে আদালত পাড়ায় উপস্থিত গুটিকয়েক বিএনপি অন্তপ্রাণ নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে দেখা না গেলেও ফটোসেশনে ঠিকই অংশ নেন বিতর্কিত বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ। এদের মত হাইব্রিড নেতাদের কারণেই আজ বিএনপি’র এই দুর্দশা। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আজ তিলে তিলে মেরে ফেলা হচ্ছে অথচ এসব হাইব্রিড নেতারা রাজপথে নামার প্রয়োজন মনে করেন না।
নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম আজাদের পরিচিতি নব্য কিংমেকার হিসেবে। বিশেষ করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনের বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে থাকেন নজরুল ইসলাম আজাদ। জনশ্রুতি রয়েছে আজাদকে খুশি করতে পারলে বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয় থাকলেও বাগিয়ে আনা যায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী। তাই রাজপথের ত্যাগি নেতাকর্মীদের জন্য বর্তমানে অভিশাপের আরেক নাম নজরুল ইসলাম আজাদ।
তবে কমিটি বাণিজ্য করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে আজাদকে। আড়াইহাজারের অনেক নেতাকর্মীকে পদ-পদবি দেওয়ার কথা বলে টাকা পয়সা নিয়ে পদ-পদবী দিতে না পারায় নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তা হয়েছেন বেশ কয়েকবার। আর এ কারনেই বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কিংবা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানও নিজ এলাকায় আয়োজন করতে পারেন না নজরুল ইসলাম আজাদ। গত ৩০ মে তারিখে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানও নিজ এলাকা আড়াইহাজারে আয়োজন করতে পারেননি নজরুল ইসলাম আজাদ।
এদিকে নজরুল ইসলাম আজাদ আড়াইহাজারের নেতা হলেও শহর-বন্দর-গ্রাম যেখানে কমিটি গঠনের গন্ধ ছড়ায়, সেখানেই গন্ধ শুঁকে চলে আসেন নজরুল ইসলাম আজাদ। সমগ্র নারায়ণগঞ্জে বিএনপি এবং যতো অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন হচ্ছে, সখানেই তার হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কমিটি বানিজ্যকে অনেকটা অলিখিতভাবেই জায়েজ করে ফেলেছেন এই নেতা।
নেতাকর্মীরা জানায়, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে এখন এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম নজরুল ইসলাম আজাদ। মূলত আড়াইহাজারের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট থাকলেও পুরো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উপরে তার একক কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই সুচতুর রাজনীতিবিদ। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কথা বললে তাকে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এমনটাই দেখা গেছে অতিসম্প্রতি। আড়াইহাজারের একটি অনুষ্ঠানে নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক। এই বক্তব্যের তিন দিন পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুবদল নেতা। যদিও তিনি পদত্যাগের কারণ হিসেবে পারিবারিক সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন কিন্তু আজাদের চাপেই তাকে দল ছাড়তে হয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ আজাদ বিএনপি নেতা হলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সাথে তার রয়েছে যোগসাজশ। এমনকি প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে চলেন আজাদ। ফলে যে কাউকে ভয় দেখানো আজাদের বা হাতের কাজ।