খোরশেদ শিবিরে শোকের মাতম, দল ছাড়ার হুমকি!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দীন মন্তুকে আহ্বায়ক এবং মনিরুল ইসলাম সজল সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় যুবদলের প্যাডে দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি ও শাহেদ আহমেদ।

নতুন এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই শোকের মাতম শুরু হয়েছে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের শিবিরে। খোরশেদ অনুসারী যুবদল নেতাকর্মীরা ঘোষিত কমিটিকে গালমন্দ করে যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এমনকি গণহারে পদত্যাগের হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন তারা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খোরশেদ অনুসারী মাজহারুল ইসলাম জোসেফ লিখেছেন, আমরা লজ্জিত ও দুঃখিত-নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলে বিতর্কিত,অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার প্রতিবাদে- বন্দর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের একযোগে পদত্যাগ- সভাপতি আমির হোসেন বন্দর থানা, সাংগঠনিক সম্পাদক তুষার আহম্মেদ বন্দর থানা, জুয়েল প্রধান সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, জুয়েল রানা সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা , ইকবাল হোসেন -যুগ্ন সম্পাদক সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, নূর আলম খন্দকার যুগ্ন-সম্পাদক বন্দর থানা যুবদল, কাজী সোহাগ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বন্দর থানা যুবদল সহ বন্দর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সকল নেতৃবৃন্দের পদত্যাগ ঘোষনা।

রানা মুজিব লিখেছেন, এক যুগে চলছে পদত্যাগ নাঃগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের!!!
ফ্যাক্টঃ ওয়েস্টিন হোটেল কমিটি??? খেলা শুরু আপনিও আমন্ত্রিত।।

জুয়েল প্রধান লিখেছেন, আমাদের টাকা পয়সা নাই জায়গা জমিও নাই, তাই আমাদের কমিটিতে কোন পদও নাই, এই হল কেন্দ্রীয় যুবদলের অবস্থা।

রাসেল আহমেদ মনির লিখেছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানার মতো কাজ ওনারা করেন নি,তাই আমি পদত্যাগ, করবো ইনশাআল্লাহ,

মাহবুব হাসান জুলহাস লিখেছেন, সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করবো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খোরশেদ অনুসারীদের রাতভর এমন স্ট্যাটাসে অনেকে আবার হাস্যরস করে কমেন্টও করেছেন। কেউ কেউ লিখেছেন এরা দলের রাজনীতি করেনা এরা ব্যক্তির রাজনীতি করে, এরা বিএনপি কর্মী না, এরা খোরশেদের কর্মী। তাদের পদত্যাগের বিষয়ে ফেসবুকে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। কারণ পদ পেলে রাজনীতি করবেন, পদ না পেলে পদত্যাগ করবেন, সেটা কখনো কোনো রাজনীতিবিদের নীতি হতে পারে না। তাছাড়া তারা পদত্যাগ করে কোথায় যাবে, আওয়ামী লীগ নাকি জাতীয় পার্টিতে, সে কথাও লিখেছেন অনেকে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটিতে একাধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। নিজের অনুগত লোকদের দিয়ে কমিটি করতেন এবং ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিতেন খোরশেদ। গুঞ্জন আছে নিজের কর্মচারী দারোয়ান মালি ড্রাইভার আর চাকর বাকরদের কমিটিতে পদ দিয়েছেন তিনি অথচ রাজপথের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে করেছেন অবহেলা।

তাছাড়া মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিশাল বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে খোরশেদের বিরুদ্ধে। সিদ্ধিরগঞ্জের কমিটির জন্য মমতাজউদ্দীন মন্তুর কাছ থেকে ৫ লাখ এবং বন্দরের আহমদ আলীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয়ায় ঘটনতো পুরোপুরি ওপেন সিক্রেট। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় দশ হাজার বিশ হাজার করে যার কাছ থেকে যেমন পেরেছেন তেমনটাই নিয়েছেন খোরশেদ।

মহামারী করোনা কালীন সময়ে খোরশেদ নানা জনহিতকর কাজ করেছেন কিন্তু কোথাও যুবদলের ব্যানার ব্যবহার করেননি। তিনি টিম খোরশেদ নাম দিয়ে নিজেকে প্রচার করেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করেননি অথচ দিনের পর দিন নিজের প্রচার চালানোর জন্য যুব দলের নেতাকর্মীদেরকে ব্যবহার করেছেন।

সর্বশেষ খোরশেদ যুবদলে নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য এমন একজনকে আহ্বায়ক হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন যাকে গত ১৫ বছরে একদিনও রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি। একসময় ছাত্রদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে ১৫ বছর পর রাজপথে নামিয়ে নিজ বলয়ে যুবদলের কমিটি রাখতে চেয়েছিলেন খোরশেদ। কিন্তু নিষ্ক্রিয় জোসেফকে কোনভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে এত সব অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছিল কেন্দ্রীয় যুবদলের টেবিলে। তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছিল কেন তিনি বিএনপি কিংবা যুবদলকে কোথাও হাইলাইট না করে নিজের প্রচার চালিয়েছেন। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি খোরশেদ। তাছাড়া দিনের-পর-দিন মহানগর যুবদলে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার খেসারত হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবদলের গুড লিস্ট থেকে নাম কাটা যায় খোরশেদের। যার ফলাফল নতুন ঘোষিত কমিটিতে খোরশেদ অনুসারী কাউকেইই রাখা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু।

আংশিক কমিটি ঘোষনার ৫ মাস পর খোরশেদকেই সভাপতি রেখে ২০১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে দেয়া হয় মহানগর যুবদলের কমিটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ