নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের গত নির্বাচনে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। এবারের নির্বাচনেও তিনি একই কায়দায় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পেলেও মতি নেতাকর্মী শূণ্যতায় ভুগেন। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সায়েম আহমেদ নির্বাচনের ঘোষণা দিলে সায়েম আহমেদের বিজয় যখন নিশ্চিত তখন সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন কুটকৌশলে বিশেষ দু’একজন ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে মতিকে বসিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসেন। এবার জাকিরও চান বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে। সেই লক্ষ্যে সায়েম আহমেদ ও তার আত্মীয়স্বজন-নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। কিন্তু শেষতক জামিন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে জনতার স্রোত নিয়ে চমক দেখালেন আবারো।
এর বছর খানিক আগেই মতি আবারো বিনাভোটে চেয়ারম্যান হবেন-এমনটা প্রচার করলে আলীরটেক ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করেন সায়েম আহমেদ। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর ভোটের অধিকার রক্ষায় লড়ে যাচ্ছেন সাহসী এই চেয়ারম্যান প্র্রার্থী।
সাঁজানো ঘটনায় মিথ্যা মামলা ও নেতাকর্মীদের হুমকি ধমকি সহ নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্বাচনী মাঠে অটুট রয়েছেন চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদ। ষড়যন্ত্রের জাল বেধ করে ৩ নভেম্বর বুধবার আলীরটেক ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে নির্বাচনী গণসংযোগে নামেন তিনি।
গণসংযোগ শেষে সায়েম আহমেদ আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে অনেকেই বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চেয়েছিল, কিন্তু আমার জন্য সেটা পারেনি। আমি আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছি, আপনারা ভোট দিতে পারবেন, আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল তারা। আমি আপনাদের নিয়ে আন্দোলন করেছি এবং এখানো ভোটের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছি। আপনাদের বিবেকের আদালতের কাছে আমি আনারস মার্কায় ভোট চাই। আলীরটেকবাসী যদি মনে করেন আপনাদের নিয়ে আমার আন্দোলনের ফলেই এখানে ভোটাভুটি হচ্ছে, তাহলে সেই ভোট আমি প্রাপ্য কিনা সেটা আপনাদের বিবেকের আদালতে আমার দাবি।
এর আগে সায়েম আহমেদের নির্বাচনী গণসংযোগে কয়েক হাজার জনতার অংশগ্রহণে জনস্রোত সৃষ্টি হয়। যেখানে শত শত নারীরাও আনারস প্রতীকে ভোট প্রার্থনায় মিছিল করেছেন। যা আলীরটেক ইউনিয়নে বিরল ঘটনা। ইতিপূর্বে গত ৫০ বছরের কোনো নির্বাচনেও এই ইউনিয়নের নারীরা প্রকাশ্যে ভোট চাইতে নির্বাচনী মাঠে এভাবে নামেননি। অথচ সায়েমের পক্ষে তারা মিছিল করে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আলীরটেক ইউনিয়নের গোপচর বাজার সংলগ্ন ঘাট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন চেয়ারম্যান প্র্রার্থী সায়েম আহমেদ। সেখানে সায়েম আহমেদের আগমন উপলক্ষ্যে হাজার হাজার জনতা অবস্থান নিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় আনারস আনারস শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আলীরটেকের পুুরো এলাকা। হাজার হাজার জনতার ভীড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন সায়েম আহমেদ। সেখান থেকে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন তিনি।
গণসংযোগকালে শত শত নারীরা তাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তার দ্বারে, কেউবা ভবনের ছাদে, কেউবা বাড়ির কোণো অবস্থান নেন। মিথ্যা মামলায় সায়েম আহমেদকে হয়রানি করায় বৃদ্ধ মায়েরা সায়েম আহমেদকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নারীরা এর জবাব ভোটের মাধ্যমে দিবেন বলে জানান। অনেক নারী জানান সায়েম আহমেদের জামিনের জন্য নারীরা নফল রোজা রেখেছিলেন। ওই সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শতশত নারীরাও আনারস প্রতীকে শ্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। সায়েম আহমেদকে ফুলের মালা গলায় পড়িয়ে দিয়ে বরণ করে দেন নারী ভোটাররা।
শুধু নারীরাই নন, যুবক-বৃদ্ধ মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ সায়েম আহমেদের নির্বাচনী গণসংযোগে নেমে পড়েন। আনারস আনারস শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে আলীরটেক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। জনস্রোত নিয়ে সায়েম আহমেদ আলীরটেক ইউনিয়নের গোপচর, কুড়েরপাড়, কুড়েরপাড় বাজার সহ বেশকটি এলাকা সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত ভোট প্রার্থনা করেন।
কুড়েরপাড় বাজারের সামনে গিয়ে সায়েম আহমেদের এই নির্বাচনী গণসংযোগ প্রথম দিনের মত সমাপ্তি হয়। ওই সময় সায়েম আহমেদ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
ওই সময় সায়েম আহমেদ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহ প্রশাসনের প্র্রতি অনুরোধ রেখে বলেন, আলীরটেক ইউনিয়নের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে চায়। আপনারা সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
একই সঙ্গে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের প্রতি অনুরোধ রেখে বলেন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। এখানে যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে সে কোনোদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেনি। এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মতি্উর রহমান মতি। তাকে জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরিয়ে দিয়ে আজকে আরেকজনের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হয়েছে, তাকে নৌকা প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনা দেয়নি। সে কিছু কিছু নেতাদের ম্যানেজ করে এটা নিয়ে এসেছে। আজকে জামাত হেফাজত নিয়ে সে নৌকার মিছিল করছে। তাই দুঃখভারাক্রান্ত মনে বলতে চাই, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আলীরটেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগকে বাঁচান। আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা করুন।
সায়েম আহমেদের এলাকায় এই বক্তব্য চলাকালে নৌকা প্রতীকের বেশকটি গাড়ি করে বেশকটি মাইক বাঁজিয়ে বক্তব্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি করার সময় তিনি সাংবাদিকদের দৃৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, আপনারা দেখতে পারছেন এখানে তারা উস্কানী দিচ্ছে, আমাদের এলাকায় আমরা বক্তব্য দিচ্ছি, অথচ তারা এভাবে উস্কানী দিচ্ছে, আপনার দেখুুন।’
ওই সময় সায়েম আহমেদ তার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা শান্ত থাকবেন। তারা উস্কানী দিবে, আমরা উস্কানীতে পা দিবো না। কুকুর পায়ে কামড়ালে কুকুরের পায়ে কামড়াতে হয় না। আমরা আইন শৃঙ্খলা মেনে চলবো। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রশাসন এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন এবং আপনারা আপনাদের ভোট যাকে খুশি তাকে দিবেন।