নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: সায়েম আহমেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। ২ নভেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এই আগাম জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ বলেন, নির্বাচন থেকে আমাকে ও আমার লোকজনকে দূরে রাখতেই আমার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী কল্পকাহিনী সাঁজিয়ে মিথ্যা বানোয়াট হয়রানিমুলক মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এলাকার নিরীহ অসহায় সাধারণ মানুষকেও আসামি করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই জামিন পেয়েছি। এই হয়রানির বিচার আমি আমার আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর উপর ছেড়ে দিলাম। ব্যালটের মাধ্যমে আলীরটেক ইউনিয়নবাসী এর জবাব দিবেন।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ২২ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে আলীরটেক এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী জাকির হোসেনের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আলীরটেক ইউনিয়নের গুঞ্জুকুমারীয়া এলাকা থেকে জাকির হোসেন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা যাওয়ার পথে কুড়েরপাড় ব্রীজে যানজট থাকায় অটোরিক্সা চালক ও অটোর যাত্রীদের মারধর শুরু করে।
ওই সময় অটোযাত্রী কুড়েরপাড় এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে আলামিন অটোরিক্সা চাপাতে বলা মাত্রই জাকির হোসেন বাহিনীর সন্ত্রাসী আবদুর রহমান সহ ৭/৮ জন আলামিনকেও মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা সেভেন আপের বোতল ভেঙ্গে আলামিনের পেটে আঘাত করতে গেলে আলাামিন হাত দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
ওই সময় ভাঙ্গা সেভেন আপের বোতলের আঘাতে আলামিনের হাত রক্তাক্ত জখম হয়। একই সময় সন্ত্রাসীরা উপর্যুপুুরি আলামিনকে মারধর করতে থাকলে আলামিন মাটিয়ে লুটিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আশপাশের লোকজন এসে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আলামিনকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে আলামিনের হাতে ৬টি সেলাই দেয়া হয়। পরবর্তীতে আলামিন সদর মডেল থানায় গুঞ্জকুমারীয়া এলাকার আব্দুল গণির ছেলে আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখ করে আরো ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু আহত আলামিনের অভিযোগে মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। উল্টো হামলাকারীদের পক্ষে মামলা গ্রহণ করে আহত রক্তাক্ত জখম আলামিনকেও আসামি করা হয়।
এই ঘটনার একদিন পর পুলিশের রহস্যকজনক ভুমিকায় ভিন্ন অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ, তার আত্মীয়-স্বজন ও তার লোকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। সদর থানা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দারী এসএম সালেহ আহামেদ খোকন এই মামলা দায়ের করেন। অথচ অটো যাত্রী আলামিনকে মারধর করেছিল জাকির হোসেনের লোকজনই।
এই ঘটনার বিষয়ে স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী জাকির হোসেন এলাকায় আতংক সৃষ্টি করতেই তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালানোর ঘটনা ঘটিয়েছে। মুলত প্রভাব বিস্তারের লক্ষেই জাকির হোসেনের সন্ত্রাসীরা যানজটের অজুহাতে অটোচালক ও অটোযাত্রীদের মারধরের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এমন ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো জাকির হোসেন সাধারণ মানুষের নামে মামলা দিয়ে জোর করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চাইছে। কারন জাকির হোসেন চেয়েছিলেন এই নির্বাচনে তিনি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাবেন। এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্ধি স্বতন্ত্র প্রার্থী সায়েম থাকায় নৌকার প্রার্থী জাকির হোসেন সেটা করতে পারেনি। যে কারনে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে প্রভাববিস্তারের জন্য জাকির হোসেন নিরীহ মানুষের উপর সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন।
জাকির হোসেনের এমন কুটকৌশলের পর অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে মিথ্যা মামলায় স্বতন্ত্র প্র্রার্থীর আত্মীয়স্বজন ও নেতাকর্মীদের পুণরায় হয়রানি না করার দাবিতে এবং নিরীহ মানুষদের নির্যাতন না করার দাবিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) সহ ৮টি রাষ্ট্রীয় দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ।
গত ২৫ অক্টোবর সোমবার ও ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ এসব দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন। লিখিত আবেদনে তিনি অভিযোগ তুলেছেন- ইউপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ ও তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কল্পকাহিনী সাঁজিয়ে গত ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হয়রানিমুলক মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রভাবিত করে এলাকার নিরীহ জনগণ সহ তার লোকজনকে এলাকা ছাড়ার হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
২৫ অক্টোবর সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশন, পুুলিশ হেডকোয়াটার্স আইজিপির কমপ্লেইন মনিটরিং সেল, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেন তিনি। এছাড়াও ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কমিশনার ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একই আবেদন তিনি দাখিল করেছেন।