১০ মাসেও কমিটি দিতে ব্যর্থ জেলা বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ মেইল: চলতি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি। কথা ছিলো তিন মাসের মধ্যে জেলা বিএনপি’র আওতাধীন পাঁচটি থানা এবং পাঁচটি পৌরসভার কমিটি গঠন করে সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। কিন্তু তিন মাসের জায়গায় ১০ মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনো দেখা নেই কোন ইউনিট কমিটির। বরং ইউনিট কমিটি গঠন করতে গিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে। অভিযোগের মাত্রা এতই বেশি যে কেন্দ্রীয় নেতারাও সমাধান করতে না পেরে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই দফা বৈঠকেও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় দুই নেতা। সর্বশেষ রোববার (২৯ আগস্ট) তৈমূর ও মামুনকে নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির দুই সহসাংগঠনিক। টানা তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এই বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।

এদিন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুল হাইকোর্ট এলাকায় তৈমূর আলমের চেম্বারে বৈঠকে বসেন তৈমূর এবং মামুনকে সাথে নিয়ে। এসময় সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। তিনটার থেকে শুরু হওয়া বৈঠক চলে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। তবে, কোনো রকম সমাধানে করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ওই দুই নেতা।

এর আগে শনিবার রাত দশটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুল তৈমূর আলমের ব্যক্তিগত চেম্বারে বৈঠকে বসেছিলেন তৈমূর ও মামুন মাহমুদকে নিয়ে। দুই ঘণ্টার উপরে চলাও ওই বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আওতাধীন পাঁচটি থানার প্রায় প্রতিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছেন আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার এবং সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ। বিশাল অঙ্কের টাকার লেনদেনের মাধ্যমে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড নেতাদের কমিটিতে আনার অভিযোগ এই দুজনের বিরুদ্ধে।

সূত্র মতে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব পদে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের পছন্দ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য শাহ আলম হিরা। অপরদিকে সোনারগাঁয়ের সদস্য সচিব পদে আরেক হাইব্রিড নেতা মোশাররফ হোসেনকে চাইছেন মামুন মাহমুদ।

উল্লেখ্য, শাহ আলম হীরার মা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, ছোট ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরেক ভাই সাইলো শাখা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সম্বন্ধি পাঁচ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এছাড়াও শাহ আলম হীরা নরঘাতক নূর হোসেনের অন্যতম সহযোগি। এবং মোশারফ হোসেন নিজ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে না থেকে আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চেয়ে বেড়িয়েছিলেন এবং ক্যাম্পেইন করেছিলেন।

নরঘাত নূর হোসেনের সঙ্গে অত্যান্ত সুসম্পর্ক ছিলো মামুন মাহমুদের। এখনও সে সম্পর্ক রয়েছে। এবং নূর হোসেনের চাওয়াতেই শাহ আলম হীরাকে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির সদস্য সচিব বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মামুন মাহমুদ। মূলত এই শাহ আলম হীরার মাধ্যমেই নূর হোসেনের সঙ্গে মামুনের সম্পর্ক তৈরি হয়। সুবাধে মামুন যুবদলে পদায়ন করেছিলেন শাহ আলম হীরাকে। এবার করতে চাইছেন বিএনপির সদস্য সচিব।

অন্যদিকে সোনারগাঁয়ের মোশারফ হোসেন বহু আগের থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার শর্তে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ারও প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন লিয়াকত হোসেন খোকার কাছে। এছাড়াও তিনি নিজ দলীয় প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের পক্ষে কাজ না করে প্রাকাশ্যেই আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান কালামের পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। করেছিলেন ক্যাম্পেইন। মামুন মাহমুদেও ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোশারফ। বর্তমানে তিনি মোশারফরে সিদ্ধিশ্বরী বাসায় থাকছেন। সেখানে বসেই কমিটি বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ