১৮ বছর একই মুখ, পরিবর্তন চায় নগরবাসী

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে নগরবাসীর মনে।২০০৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেই থেকে গত ১৮ বছর যাবত একই মুখ দেখে আসছে নগরবাসী। তাই এবার তারা পরিবর্তন চায়।

বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচিত-সমালোচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে একাট্টা হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাই আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে মেয়র আইভী। তবে নিজ দলের নেতাদের সাথে বিরোধ থাকলেও সরকার বিরোধীদের সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক। বিএনপিসহ বাম রাজনৈতিক নেতা যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন এমন ব্যক্তিরাই মেয়র আইভী ঘনিষ্ঠজন। গত নাসিক নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হলেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মেয়র আইভীর সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়ে বেশি সরকারবিরোধী ব্যক্তি দেখা গিয়েছিল। তাই আগামী নির্বাচনে মেয়র আইভীর বিকল্প খুঁজছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, আগামী নির্বাচনে হচ্ছেন নৌকার দাবিদার নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ সেই ব্যবসায়ীর পক্ষে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধীদের প্রশ্রয়ের বিষয়টি জোরালো ভাবে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে নৌকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বর্তমান সিটি মেয়র আইভীর।

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে নগরবাসীর মনে। বিশেষ করে নাসিক মেয়র পদে কে আসতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। প্রায় ১৮ বছর যাবত ঘুরেফিরে একই মুখ দেখতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তাই এবার পরিবর্তন চায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ।

এছাড়াও বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করা বিএনপি ও বিভিন্ন বামদলের নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়ার কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও আইডির উপরে নাখোশ। সরকার বিরোধীদের সাথে নিয়ে চলাফেরার মাশুল এবার তাকে গুণতে হতে পারে। আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা এবার আইভীর কাছে ধরা না দিলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নগরবাসীর মতে, ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে মেয়র আইভীর সবচেয়ে ঘনিষ্টজন হয়ে ওঠেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর বিভা হাসান। এমনকি সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হয়েও আইভীর চেষ্টায় প্যানেল মেয়র-১ নির্বাচিত হন বিভা। আর এই বিভা হাসান হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী পরিবারের পুত্রবধূ। এক সময়ে জিমখানা পাইকপাড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বিএনপি নেতা মজিদ কমিশনার এবং তার ছোটভাই হাসান আহমেদ। সেই হাসান আহমেদের স্ত্রী হলেন বিভা। মারামারি, সন্ত্রাস এবং নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামি মজিদ ও হাসান দুই ভাই। এমনকি কাশিপুরের ডাবল মার্ডার মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন তারা দুজন। বর্তমানে হেফাজতের নাশকতার মামলায় রিমান্ডে আছেন হাসান।

এলাকাবাসী জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মজিদ ও হাসান বাহিনীর অত্যাচার কিছুটা কমে গেলেও বিভা হাসান কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরে এবং তিনি আইভীর কাছের মানুষ হয়ে উঠায় আবারও পুরনো রূপে ফিরে যান দুই ভাই। তারা চাঁদাবাজি সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন এবং এর পেছনে আইভীর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় কেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

দু’বছর আগে সংগঠিত হওয়া হকার সংঘর্ষের ঘটনার দিনে আইভীর পাশে বিএনপির ক্যাডার, হাসান, যুবদল নেতা সুমন, খোরশেদসহ বিএনপি ও বাম রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখা গিয়েছিলো, যা কোনভাবেই ভালোভাবে নেয়নি স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন সেই রফিউর রাব্বি মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠজনদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরকে অশান্ত করছেন রফিউর রাব্বি। মূলত মেয়র আইভীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় সরকারের কড়া সমালোচনা করেও শহরে বেশ দাপটের সাথেই বসবাস করছেন রফিউর রাব্বি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার অনুসারীরা উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সরকারি-বেসরকারি এমনকি মসজিদ মাদ্রাসা মন্দিরের সম্পত্তি জোরজবরদস্তি দখল করে নিচ্ছেন। নিরীহ সাধারণ জনগণও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। মুখে উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে অন্তরে দখল-বাণিজ্যে পুষে রাখে মেয়র আইভী ও তার পরিবার- এমনটাই অভিযোগ নগরবাসীর।

আইভীর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের অতিরিক্ত প্রশ্রয় আর বিভিন্ন স্থাপনা অবৈধ দখলের অভিযোগ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পৌঁছে গেছে। গত ১৮ বছর একটানা মেয়রের দায়িত্বে থাকায় আইভীর এই অধঃপতন বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আর তাই আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানা গেছে। আরে মনোনয়ন তালিকায় নতুন করে একজন সফল ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। যদিও নিশ্চিত ভাবে ওই ব্যবসায়ীর নাম জানা যায়নি। তবে দলীয় সূত্রে এটা নিশ্চিত যে, আগামী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ