নারায়ণগঞ্জ। মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবারেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রথমে পৌরসভার চেয়ারম্যান ও পরে দুই দুইবার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অথচ তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বড়গলা করে বলেন, তার কোনো ব্যক্তিগত সহায়-সম্পত্তি নেই, নেই কোন ব্যাংকে একাউন্ট। তিনি পেশায় একজন ডাক্তার হলেও ডাক্তারি কখনো করেন না। শুধুমাত্র জনসেবাই তার একমাত্র ব্রত।
ব্যাংক একাউন্ট না থাকলেও, ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা জমা না থাকলেও রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি ঠিকই গড়ে তুলেছেন সিটি মেয়র আইভী। দেখতে পুরো সাদা রঙের এই বাড়িটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে “হোয়াইট হাউস” নামে পরিচিতি পেয়েছে। কয়েক কোটি টাকা মূল্যের এই বাড়িটি এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর আলোচনার খোরাক। যার কোনো ব্যাংক একাউন্ট নেই, যার কোন ব্যাংক ব্যালেন্স নেই, সে কি করে এতো বড় প্রাসাদের মতো বাড়ি তৈরি করেন। তাহলে তার আয়ের উৎস কি- এ নিয়ে প্রশ্ন এখন নগরবাসীর মনে।
জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে আসেন সাবেক পৌর পিতা আলী আহমদ চুনকার কন্যা সেলিনা হায়াৎ আইভী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জে জোর প্রচারণা চালান দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। বিএনপির প্রার্থী নুরুল ইসলাম সরদারকে হারিয়ে শুরু হয় পৌর চেয়ারম্যানের পথ চলা। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শামীম ওসমানের মত প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে। সবশেষ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া ২য় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। তবে এবার তার ভাগ্যে জুটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েন আইভী। ওই সময়ে তিনি মোট আয় দেখিয়েছিলেন ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৭৫ টাকা কর দিয়েছেন। নিজের সম্পত্তি হিসেবে তিনি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৪ শতাংশ কৃষিজমির কথা উল্লেখ করেছেন। ওই সময়ে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, বাবার বাড়িতে তিনি বসবাস করেন এবং তার খরচ তার স্বামী বহন করেন। তার দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচও স্বামী দেন। তার কোনও বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই। কোনও ব্যবসাও নেই। ব্যাংকে শেয়ার বা সঞ্চয়পত্র নেই। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা জমা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের খরচ হিসেবে তিনি ওই ১০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। মেয়র হিসেবে তিনি এ টাকা সম্মানী হিসেবে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে সর্বশেষ ২০১৬ সালে এসে তার সম্পত্তি বেড়েছে দ্বিগুন। নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া হলফনামায় আইভী উল্লেখ করেছেন, মেয়র হিসেবে তিনি বছরে বেতন পান ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করা আইভী তার শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি)। আইভীর কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ১৫ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ টাকা। স্বর্ণ ও অন্য অলংকার ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার। ইলেট্রনিক সামগ্রী ২ লাখ টাকার। আসবাবপত্র ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে যৌথ মালিকানার ১১২ শতাংশ অকৃষি জমির ৮ ভাগের ১ ভাগের মালিক। আইভী পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। আইভীর মোট সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৪২ লাখ টাকা।