নারায়ণগঞ্জ মেইল: ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। পাঁচটি থানা কমিটি গঠন করতে গিয়ে সংগঠনের সর্বনাশ ডেকে আনছেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। টাকার বিনিময় অযোগ্য আর নিষ্ক্রিয় নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। আর এসব অভিযোগের তীর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের দিকেই বেশি। নেতাকর্মীদের অভিযোগ অর্থের বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন থানা ও উপজেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসন করার চেষ্টায় মত্ত রয়েছেন।
তৃণমূলের দাবি, যারা বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির জন্য জেল জুলম অত্যাচার সহ্য করে এষনও দলের হয়ে কাজ করছেন তেমন নেতাদের মাইনাস করে আওয়ামী লীগ পরিবার ও ক্ষমতাসিন এই দলটির জন্য ভোট চাওয়া ব্যক্তিদের থানা ও উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চাইছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব। এ নিয়ে দলটির তৃণমূলের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
দলটির তৃণমূল বলছে, দলকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে আরও দুর্বল করার চক্রান্তে দুষ্টু চক্রের ভূমিকা পালন করেছেন মামুন মাহমুদ। তিনি নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে এসব কর্মকাণ্ড সংঘটন করছেন বলেও তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগ তুলেন। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে মামুন মাহমুদের কোনো ভিত নেই। এখানকার আলো-বাতাস ও মাটি-মানুষের সঙ্গেও তার সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় গুটি কয়েক নেতার সুবাদে তিনি যুবদলের সভাপতি, পরে জেলা বিএনপির সেক্রটারি এবং বর্তমানে সদস্য সচিব হয়েছেন। এই পদের কোনোটিতে আসার যোগ্যতা তারা নেই। তারপরও তিনি এসেছেন।
সূত্র বলছেন, যুবদলের সভাপতি থাকাকালিন সময় থেকেই পদ বাণিজ্য শুরু করেন মামুন মাহমুদ। তিনি বিএনপির কর্মী না হয়ে শিল্পপতি শাহ আলমের একনিষ্ঠ কর্মীরা ভূমিকা পালন করতে থাকেন। সেসময় তিনি শাহ আলমের এক ইচ্ছেতে দলের শূন্য প্যাডে ফতুল্লা থানা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেন। এ নিয়ে সেসময় ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন তিনি। শোনা গিয়েছিলো, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই কমিটি দিয়েছিলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালিন সময়ে শাহ আলমের ইচ্ছেতে এক রাতের মধ্যেই ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন মামুন মাহমুদ। এর আহ্বায়ক করা হয় আওয়ামী লীগ ঘেঁষা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে। এ নিয়েও তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
বিএনপির অনেক নেতাই আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী যেখানে ঠিকমত সংসার চালাতে পারেন না, সেখানে মামুন মাহমুদ দিন দিন ফুলেফেঁপে মোটাতাজা হচ্ছেন। দলের চরম দুর্দিনেও তিনি কয়েক লাখ টাকা খরচ করে গাড়ি কিনেন। শোনা গিয়েছে, এই গাড়িটি শিল্পপতি শাহ আলম এবং কাজী মনির মামুন মাহমুদকে নাজরানা হিসেবে দিয়েছেন। বিনিময়ে এই দুই শিল্পপতির ইচ্ছেতে রূপগঞ্জ ও ফতুল্লা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপি সাজিয়ে দিচ্ছেন তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে।
দলীয় সূত্র আরও বলছে, কাজী মনির ও মামুন মাহমুদের নেতৃত্বাধিন জেলা বিএনপি দুর্বল নেতৃত্ব ও অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কারণে কমিটিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিলুপ্ত করে কেন্দ্র। পরে দীর্ঘ কয়েক মাস তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কথা ছিলো তিন মাসের মধ্যে তারা সকল থানা ও উপজেলা কমিটি গঠন করে জেলা বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন করবেন। কিন্তু আট মাসেও তারা সেটি পারেনি। তবে, সম্প্রতি বিভিন্ন থানা ও উপজেলা কমিটি গঠনের তোড়জোর চলছে। যেকোনো সময় দশটি কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে।
তবে, ঘোষিত হতে যাওয়া কমিটিগুলো নিয়ে ব্যাপক পদ বাণিজ্য শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর এই বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে মামুন মাহমুদের। ইতোমধ্যে তিনি ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁ কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সূত্র বলছে, সোনারগাঁয়ে মোশারফ হোসেন, ফতুল্লায় জাহিদ হাসান রোজেল, পান্না মোল্লা এবং সিদ্ধিরগঞ্জে শাহ আলম হীরা ও রিয়াজুলকে পদে আনতে মোটা অঙ্কের টাকা বাণিজ্য করার খবর চাউর হয়েছে শহরজুড়ে।
জানা গেছে, হেফাজতের সহিংসতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীশূন্য। মামলায় জর্জড়িত দলটির নেতাকর্মীরা পলাতক। কেউ কেউ আবার জেলে রযেছেন। এমন পরিস্থিতিতে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান শাহ আলম হীরাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব করতে বেশ তোড়জোর চালাচ্ছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ।
এদিকে কোনোভাবে যদি হীরাকে সদস্য সচিব করা সম্ভব না হয় তবে, রিয়াজুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যক্তিকে এই অঞ্চলের সদস্য সচিব যে করেই হোক করতে চাচ্ছেন মামুন মাহমুদ। শোনা যাচ্ছে, এই ব্যাপক অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদেরকে এই পদে নিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মামুন। সূত্রের মতে, নরঘাতক হিসেবে খ্যাত, সেভেন মার্ডারের অন্যতম হোতা নুর হোসেনের অন্যতম সহযোগি শাহ আলম হীরা। এছাড়া তার মা রাশেদা বেগম সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। হীরার এক ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অপর এক ভাই সাইলো শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
সূত্র বলছে, ব্যাপক অর্থের বিনিময়ে শাহ আলম হীরার মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিএনপির পদে নিয়ে আসতে চাইছেন মামুন মাহমুদ। তবে, কোনোভাবে যদি তাকে আনা না যায় এখানে রিয়াজুল নামে আরও একজনকে বসাতে চান। এই রিয়াজুল ইসলাম ডেমরা এলাকার বাসিন্দা। মামুন মাহমুদ ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে সিদ্ধিরগঞ্জ তিন নং ওয়ার্ডে এসে ভোটার হয়েছেন তিনি। এই পর্যন্ত এই ব্যক্তিকে কোনো কর্মসূচিতে কেউ দেখেনি বলেও জানা গেছে। শাহ আলম হীরাও দলের কোনো কর্মসূচিতে কখনই ছিলেন না। এমনকী তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি।
অন্যদিকে সোনারগাঁয়ে মোশারফ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে কমিটির নেতৃত্বে আনতে প্রস্তাব করেছেন মামুন। এবং তাকে যে করেই হোক নেতৃত্বে আনার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। অথচ এই মোশারফ হোসেন বিগত দিনে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন দ্বারে দ্বারে ঘুরে। এমনকী ক্ষমতাসিন দলের হয়ে ক্যাম্পেইনও করেছেন।