নারায়ণগঞ্জ মেইল: কমিটি বাণিজ্যের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে সোনারগাঁয়ে বিএনপি’র থানা কমিটি গঠন কার্যক্রমে। বিএনপি’র পরিচয়ে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা বিতর্কিত নেতাদেরকে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনা হচ্ছে, এমনটাই মঞ্জন চারিদিকে। আর এই বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়নের পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন আছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনারগাঁ বিএনপিতে হাইব্রিড নেতা হিসেবে পরিচিত মোশারফ হোসেন ও সেলিম হক রুমি থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আসছেন। একসময় যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান কালামের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে তাকে উঠতে-বসতে দেখা গেছে। সরকারি দলের সাথে আঁতাতের কারণেই বিএনপি করেও কোনো মামলা হামলায় জড়াতে হয় নি মোশারফকে। কখনো জেলেও যেতে হয়নি। এরকম হাইব্রিড নেতাকে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সদস্য সচিব করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। গুঞ্জন আছে মোশাররফকে সদস্য-সচিব করতে বিশাল অঙ্কের টাকার লেনদেন সংঘটিত হয়েছে।
এসব কারনে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন- যারা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে কাজ করেছেন তারাই এখন জেলা বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহামুদের সুদৃষ্টিতে। নিয়মিত এখন মোশারফ হোসেনকে মামুন মাহামুদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। এমনকি থানা বিএনপির সদস্য সচিব পদে মোশারফ হোসেন এর নাম আলোচিত হচ্ছে।
পৌর বিএনপির কমিটি গঠনের পর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় এমপি ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে গোপন আঁতাতের বিষয়েও অবগত স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন- ওই নির্বাচনে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থন ছিল আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের দিকে। স্থানীয় এমপির কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের শর্তে বিএনপির নেতারা কালামের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। ওই নির্বাচনে কালামের পক্ষে কাজ করা বিএনপির বেশকজন নেতা ইতিমধ্যে জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেছেন।
তাছাড়া বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে মোশারফ হোসেন সোনারগাঁয়ে এক আতংকের নাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিমের গড়া ওরা ১১ জনের একজন হলেন মোশারফ হোসেন। সোনারগাঁয়ের সকল আর্থিক, লাভজনক, প্রশাসনিক সহ সকল কিছুর নিয়ন্ত্রনে ছিলেন ওরা ১১জন। মোশারফকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। সেই মোশারফের হাতে সোনারগাঁ বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দিতে চাচ্ছেন মামুন মাহামুদ।
অপরদিকে কাঁচপুর বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমিকে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সোনারগাঁ বিএনপি’র একক নিয়ন্ত্রণ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান। কিন্তু বিএনপি নেতা সেলিম হক রুমীর বিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই সোনারগাঁয়ে। সেলিম হক রুমীর আপন ছোট ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন আরো দু’বছর আগে। তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এসব কারণে আজারুল ইসলাম মান্নানের সাথে সেলিম হক রুমির মাঝে ছিল বিশাল রাজনৈতিক দূরত্ব। দুজনের মাঝে ছিল রীতিমতো শত্রুতার সম্পর্ক। জাতীয় পার্টির সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলার কারণে সেলিম হক রুমিকে খুব একটা পছন্দ করতেন না মান্নান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোন এক অদৃশ্য ইশারায় পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। শত্রুপক্ষের সেলিম হক হয়ে পড়েন আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রিয়ভাজন। সেলিম হককে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগও করেছেন মান্নান- এমনটাও শুনতে পাওয়া যায়।
অথচ সেলিম হক রুমির ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকৎ হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে সে সময়ে স্থানীয় সোনারগাঁয়ের একটি অনলাইনকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেছিলেন, যারা বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন, দলের জন্য তাদের কোন অবদান ছিলনা, তারা সংস্কার পন্থী। এসব সংস্কার পন্থীরা সরে গেলে বিএনপির কোন ক্ষতিও হবে না ইনশাহআল্লাহ।