নারায়ণগঞ্জ মেইল: সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের তান্ডব নাশকতা ও ভাংচুরের তিনটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক ( ঢাকা বিভাগ) মশিউর রহমান রনির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার ( ২২ আগস্ট) বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাকিল আহম্মদের আদালতে মশিউর রহমান রনির আইনজীবী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ৩৫(৩)২১ এর মামলায় জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরন করেন। এছাড়া বাকী দুই মামলার নথি উচ্চ আদালতে থাকায় জামিন আবেদন করা হয়নি। মামলা নং- ৩৩ (৩) ২১, ৩৪ (৩) ২১। গ্রেপ্তারকৃত মশিউর রহমান রনি ফতুল্লা থানার পশ্চিম মাসদাইর এলাকার মোস্তফা কামালের ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের তান্ডব নাশকতা ও ভাংচুরের তিনটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে আদালতে আনা হয়েছে। তবে নথি মামলার নথি উচ্চ আদালতে থাকায় তার রিমান্ড শুনানী হয়নি। জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তিনি আরও বলেন, আসামী পক্ষের আইনজীবী একটি মামলায় জামিন চেয়ে আবেদ করলে আদালত নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরন করেন। আগামী ২৩ সেপ্টেস্বর পরবর্তী শুনানী দিন ধার্য করা হয়েছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ড চাইলে যেকোনো দিন শুনানী অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আসামী পক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমরা আজ হতাশ। শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে দলের নেতাকর্মীদের বর্তমান সরকার বিভিন্ন হয়রানী করছে। এই সরকার দেশ থেকে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি তার একটি অংশ। আজ আমরা হতবাক হয়েছি যে গত মার্চ মাসে সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে যে ঘটনা ঘটেছিলো রনি বিএনপির একটি পরিচিত মুখ। যদি সে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকতো তাহলে আগেই তাকে আসামি করা হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই তিনটি মামলা তাকে সুনরেস্ট দেখানো হয়েছে। সরকার বিরোধী দলকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যে সকল নেতাকর্মী রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তাদেরকেই বিভিন্ন মামলা দিয়ে জড়িত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এদেশে গনতান্তিক পরিবেশ নেই। তিনি আরও বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । মশিউর রহমান রনি ন্যায় বিচার পাবে বলে আমরা আশাবাদী। আজকে আমরা তার একটি মামলায় জামিন চেয়েছি আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। আমরা আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে মশিউর রহমান রনি মুক্ত করে আসবো।
আসামী পক্ষের শুনানীতে আরও অংশগ্রহন করেন, এড. মশিউর রহমান শাহিন, এড. এইচ. এম আনোয়ার প্রধান, এড. মাহমুদুল ইসলাম আলমগীর, এড. শিপলু মল্লিক, এড. সালাউদ্দিন সবুজ, এড. আবুল কালাম আজাদসহ অর্ধশতাধিক বিএনপিপন্ত্রী আইনজীবীরা।
এরআগে গত শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে রাজধানী ঢাকার বাংলামোটর এলাকা থেকে মশিউর রহমান রনিকে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। পরে রনিকে ফতুল্লা থানা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত তিনটি মামলায় রনির সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলাম। কিন্তু সে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। ওই তিন মামলায় রনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলা নং- ৩৩ (৩) ২১, ৩৪ (৩) ২১, ৩৫ (৩) ২১। তিনি আরও বলেন, জানান, রনিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মামলায় আলাদাভাবে সাত দিন করে মোট ২১ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জম্মদিন উপলেক্ষ মাসদাইর এলাকায় জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকারের বাড়ি মজলুম মিলনায়তনে ফতুল্লা থানা ছাত্রদল আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি পুলিশের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হন। রনি তার বক্তব্যে বলেন, আজ (গত মঙ্গলবার) ঢাকার কর্মসূচিতে পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা করেছে। আমি জানি না পুলিশ কাদের লোক। তারা কি সাধারণ জনগণের নাকি এককভাবে শেখ হাসিনার ? আমি বলে দিতে চাই যদি এককভাবে শেখ হাসিনার হয়ে থাকেন, আপনারা যে পোশাক পরিধান থাকেন, সেটা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা। যদি ছাত্রদল চিন্তা করে, তারেক রহমান চিন্তা করে, তবে পুলিশের সেই পোশাক খুলে ফেলবে। সেটা আমাদের ওয়ান টু ব্যাপার মাত্র। ছাত্রদল পুলিশকে প্রতিহত করবে।’ রনির এই বক্তব্যের ভিডিওচিত্র বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার ঝড় উঠে।