নারায়ণগঞ্জ মেইল: মসজিদ-মন্দিরের জায়গা দখল, শ্মশানের মাটি কবরস্থানে ফেলা, সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ণমূলক কাজের ঠিকাদারির দায়িত্ব একক ভাবে ঘনিষ্টজনদের দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে। সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে মেয়র আইভীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে মেয়রের মায়ের মৃত্যুর পর সকল অভিমান ভুলে শান্তনা দিতে মেয়র আইভীর বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। পাশাপাশি বসে আপন বোনের মতোই সহানুভতি জানিয়েছিলেন এ সংসদ। কিন্তু সেই শামীম ওসমানের মা বাবা ভাইয়ের কবরে শ্মশানের মাটি দেয় সিটি কপোরেশন বা তাদের নিযুক্ত ঠিকাদার। যা নিয়ে সাংসদ শামীম ওসমান বক্তব্য দেয়ার পর মেয়র আইভীর উস্কানীমূলক বক্তব্যের পর ফের মেয়রকে নিয়ে শহরমত বিতর্ক শুরু হয়। কবরস্থানে শ্মশানের মাটি ফেলাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের আলেম সমাজও মেয়রের প্রতি ক্ষুদ্ধ। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে অবৈধ দখলের অভিযোগ ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। রাজউকের জায়গা দখল করে মাইক্রো ও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বানানো, রেলওয়ের জায়গা দখল করে পার্ক নির্মাণ, মসজিদ ও মন্দিরের জায়গা দখল এবং এক আইনজীবীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি জোর করে দখলের তার প্রতিপক্ষরা অভিযোগ এনেছে সিটি মেয়র আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। বারবার দখল বিতর্কে জড়িয়ে সমালোচনার ঝড় তুলছেন নাসিক মেয়র আইভী।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ বহু পুরনো। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দখলে থাকা প্রায় ৪৮ কাঠা জমি উদ্ধার করে রাজউক। জমির উপর ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডসহ অন্তত অর্ধশত স্থাপনা ছিল। ঐদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজউকের একটি উচ্ছেদকারী দল এসব স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়।
এরপর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ৩২টি বাসা ও বাড়ী ভেঙে অবৈধভাবে ১৬ একর জায়গা দখল করার অভিযোগ উঠে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। সেই সাথে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তের কথা উল্লেখ করে পৃথক দুটি মামলা হয় সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত ওই মামলা দুটিতে আসামী করা হয়েছিলো এনসিসি‘র সার্ভেয়ার কালাম মোল্লা, আইন কর্মকর্তা জিএম সাত্তার, পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আলমগীর হিরণসহ অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিলো, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ৭০ বছরের পুরানো স্টাফ কোয়ার্টার ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে প্রায় ১৬ একর জায়গা দখল করে নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী কোন সরকারী সম্পত্তি অন্য কোন সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা সংশ্লিষ্ট মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে লিখিত অনুমতি সাপেক্ষেই কেবল লিজ বা দখলভোগ করতে পারে। এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এ জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। এমনকি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দখলে বাধা দিতে গেলে তাদের উপর এক্সাভেটর (ভেকু) তুলে দিয়ে চাপা দেয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। এব্যাপারে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ও ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছিলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
দেওভোগের ঐতিহ্যবাহী জিউস পুকুর ও লক্ষীনারায়ণ আখড়া মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ওঠে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। মন্দিরের সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমবারের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। পরবর্তীতে একই দাবিতে ২ ডিসেম্বর নগরীর চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয় প্রতীকী অনশন।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী ৫৩৯ বছরের পুরাতন ম-লপাড়া জামে মসজিদের ওয়াকফ এস্টেটের প্রায় ৮৩ শতাংশ জায়গায় স্থাপনা ভাঙচুর, দখলের চেষ্টা ও অবৈধভাবে বাণিজ্যিক করণের মাধ্যমে পার্ক ও মার্কেট নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা করছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী- এরকম একটা করেছিল মসজিদ কমিটি। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে মসজিদের জমির ওপর আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ নিয়েছেন বলে জানায় মসজিদ কমিটি এবং এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন তারা।
গত ২৪ জুন নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আইনজীবীর জমি দখল ও বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জলের বিরুদ্ধে। উজ্জল সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর আপন ছোট ভাই। অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৪ জুন সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার কামাল মোল্লার উপস্থিতিতে করপোরেশনের ভেকু দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর টিনশেড বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দখলকালে যুবলীগ নেতার দেড় শতাধিক সমর্থক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ শ্মশানের মাটি কবরস্থানে ফেলাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মধ্যে পড়েন মেয়র আইভী। যদিও বিষয়টি ভিন্ন ভাতে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন তিনি।
