ব্যতিক্রমী সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সবচেয়ে নিস্ক্রিয় সংগঠনের নাম মহানগর বিএনপি। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বয়সের ভারে নুয়ে পরেছেন। তাছাড়া তিনি আন্দোলন সংগ্রামে বছরের পর বছর যাবত অনুপস্থিত।, আর সাধারন সম্পাদক এটিএম কামাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অনেকদিন হলো। ফলে দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর নেতা-কর্মীদের দিয়ে কোন দায়সারাভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মহানগর বিএনপির কার্যক্রম।

এরই মাঝে ব্যতিক্রম একজন হলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। দলীয় নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সংগঠনকে চাঙ্গা করে রেখেছেন তিনি। এছাড়াও নেতাকর্মীরা সুখে-দুখে সব সময় পাশে পেয়ে থাকেন তাকে। ফলে তৃণমূলের ভরসার জায়গা এখন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত।

সূত্রে প্রকাশ, ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী এড. আবুল কালামকে সভাপতি আর এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়। কমিটি ঘোষনার পর থেকেই সভাপতি আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র রাজনীতি নিজের ড্রয়িং রুমে বন্দি করে ফেলেন। রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের পরিবর্তে আবুল কালামের বাসায় বসে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র রাজনীতি।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সৃষ্টির পর থেকে সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এখন। দলীয় চেয়ারপার্সণ বেগম খালেদা জিয়া দূর্নীতির মামলায় সাজা প্রাপ্ত হয়ে কারাগারে ছিলেন দীর্ঘদিন। এই দীর্ঘ সময়ে নির্জন কারাগারে থেকে তিনি মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। বর্তমানেও তিনি এক প্রকার বন্দী জীবন যাপন করছেন। আর তাই নেত্রীর সুচিকিৎসার দাবীতে মরিয়া হয়ে রাজপথে নামছে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীরা। অথচ এ সময়েও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালাম বিলাসবহুল এসি রুম ছেড়ে রাজপথে আসতে চান না আর সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল নেতাকর্মীদের ফেলে সুদুর আমেরিকায় বিলাসী জীবন যাপন করছেন। আর তাই অভিবাবকহীন হয়ে পরেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। ঠিক এ সময়েই দলীয় চেয়ারপার্সণ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে চলমান আন্দোলন সংগ্রামে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে টিকে রয়েছেন সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। সাখাওয়াতের হাতেই এখন অভিবাবকহীন মহানগর বিএনপি’র নিয়ন্ত্রণ।

সূত্র জানায়, গত নাসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করা এড. আবুল কালামের জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছিলো। কারন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের অপারগতায় এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে এবং বুক চিতিয়ে লড়াই করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য এক উচ্চতায়।

কেন্দ্রেও সাখাওয়াতের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় অনেকগুণ। আর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষের সাথে বেঈমানি করায় এড. আবুল কালাম কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে হয়ে যান অপরাধী। দিন যত গড়াতে থাকে, কালামের জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা- দুটিই কমতে থাকে। অন্যদিকে ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়াই করার পুরস্কার হিসেবে তৃণমূল থেকে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত সাখাওয়াতের প্রশংসা ছড়িয়ে পরে সর্বত্র।

এরপর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালাম রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রাখা নেতাকর্মীদের নিজের মতো গৃহবন্দি করার কুট কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু কালামের এই অপচেষ্টা বুঝতে পেরে নিজেই মহানগর বিএনপি’র উদ্যোগে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে থাকেন সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। আর তখনই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে অপ প্রচার করে তৃণমূল থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন আবুল কালাম। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে নালিশও করেন। কিন্তু তাতেও দমাতে পারেননি তাকে। কখনো মহানগর বিএনপি আবার কখনো অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যহত রেখেছেন এই জিয়ার সৈনিক।

দলীয় চেয়ারপার্সণের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলার রায় ঘোষনার আগে খালেদা জিয়ার সিলেট যাত্রায় স্বাগত জানাতে নারায়ণগঞ্জে কোন নেতাকর্মী সাহস না করলেও সংগ্রামী সাখাওয়াত ঘরে বসে থাকেননি।

কয়েকজন বিএনপি পন্থী আইনজীবীকে নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় দলীয় চেয়ারপার্সণকে স্বাগত জানান মিছিল করে। আর সেখান থেকেই পুলিশের হাতে আটক হন সাখাওয়াতসহ তিন আইনজীবী নেতা। ১১দিন কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে এসেও তার সংগ্রামী রূপ অব্যহত রাখেন সাখাওয়াত।

দলীয় চেয়ারপার্সণ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি যখন জেলা ও মহানগর বিএনপি চাষাঢ়া বালুর মাঠে দাড়িয়ে ফটোসেশন করে পালন করে, তখন সাখাওয়াত ঠিকই নেতাকর্মীদের নিয়ে হামলা মামলা উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আর এ জন্য নিজ দলের গৃহবন্দি নেতাদের রোষানলেও পরতে হয়েছে তাকে। নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় নেত্রীর মুক্তির দাবীতে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশী হয়রানীর শিকার হন সাখাওয়াত। সাখাওয়াতকে খুঁজতে সেদিন কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পুলিশ বার ভবনের ভিতরেও তল্লাশী চালায়। আর এভাবেই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ