নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটি নিয়ে নাটক ক্রমেই জমে উঠছে। ইতিমধ্যেই যুবদলের পদ পেতে মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে দিয়েছেন একজন। তাছাড়া প্রায় এক যুগ ঘুমিয়ে থাকা নেতা কমিটির গন্ধে জেগে উঠতে শুরু করেছেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা নেতাও পদ পদবীর লোভে ছুটে এসেছেন দেশে। সকলেই চাইছেন মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব। অথচ যারা দীর্ঘদিন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে জেল জুলুমের শিকার হলেন, তারাই রয়ে যাচ্ছেন পেছনের সারিতে। তাইতো মহানগর যুবদলের ত্যাগী এসব নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন সেসব পদলোভী নিস্ক্রিয় নেতারা।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটিতে সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন সাবেক মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদে পদোন্নতি পান। রাজনীতিতে অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতি করা নেতাকর্মীদের লক্ষ্যই থাকে মূল দলের রাজনীতির অংশ হওয়া। আর সেটা যদি হয় কার্যকরী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ, তাহলেতো কথাই নেই। সিড়ি বেয়ে সবাই উপরে উঠতে চায় কিন্তু কেউ নীচে নামতে চায় না, রাজনীতিতে সেটা শোভনীয়ও নয়। কিন্তু সেই অশোভন কাজটিই করেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল। মহানগর যুবদলে পদ পেতে মহানগর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। তার এ ধরনের কর্মকান্ডকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লষকরা। এটা রাজনীতি চর্চার একটা বাজে উদাহরন হিসেবে উল্লেখ থাকবে বলে মত তাদের।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। সে সময়ে বেশ ডাকসাইটে নেতা ছিলেন তিনি। তৎকালীন সাংসদ কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা জোসেফ দাবড়িয়ে বেড়াতেন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহর। কিন্তু ২০০৬ সালে দল ক্ষমতা ছাড়ার পর খোলসে ঢুকে পরেন জাঁদরেল এই ছাত্র নেতা। সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন তিনি। ফলে নতুন প্রজন্মের অনেক নেতাকর্মীর কাছে অচেনা এক নাম হয়ে উঠে মাজহারুল ইসলাম জোসেফ।
এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মহানগর যুবদলের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পরে ফের আলোচনায় আসা শুরু করেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলয়কে সাথে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিতে থাকেন মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। সেই সাথে আসন্ন মহানগর যুবদলের কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে নিজেকে প্রচার করতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নাম সর্বস্ব কিছু স্থানীয় গলমাধ্যমে।
তবে গত প্রায় এক যুগে দলের চরম দু:সময়ে নিস্ক্রিয় থাকা জোসেফকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না যুবদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কারন এ সময়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকদের। পুলিশের হামলার ভয়ে দিনের পর দিন ঘর বাড়ি ছেড়ে যাযাবর জীবন কাটাতে হয়েছে, গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন বহুবার। আর তাই তাদের দাবি নতুন কোনো কমিটি দেয়া হলে নেতাকর্মীদের এসব ত্যাগের মূল্যায়ন করতে হবে। কাউকে উড়ে এসে জুড়ে বসতে দেয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি তাদের।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি ছিলেন রানা মুজিব। তৎকালীন সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের খুব কাছেন লোক রানা মুজিব এক সময় বেশ সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। কিন্তু দলের চরম দু:সময়ে নেতাকর্মীদের ফেলে বিদেশে চলে যান তিনি। দীঘদিন বিদেশে কাটিয়ে ফের দেশে এসেছেন রানা মুজিব মহানগর যুবদলের শীর্ষ পদের লোভে। খোরশেদ অনুসারি নেতাকর্মীরাও রানা মুজিবকে পদ পাওয়াতে জোর প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত সাবেক সভাপতি খোরশেদ যুবদলের কতৃত্বটা নিজ বলয়ে রাখতেই রানা মুজিবকে বিদেশ থেকে দেশে আনিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু।
আংশিক কমিটি ঘোষনার ৫ মাস পর খোরশেদকেই সভাপতি রেখে ২০১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে দেয়া হয় মহানগর যুবদলের কমিটি।