নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন কাশীপুরের ফরিদুদ্দিনের সাহায্য চাওয়ার ঘটনায় সদর ইউএনওর বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করায় নারায়ণগঞ্জের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রবিবার (২৩ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের বাইসাইকেল ও পোশাক বিতরণ অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
সাংসদ একেএম শামীম ওসমান বলেন, কয়েকজন নারায়ণগঞ্জ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করছে। এতে আমাদের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। নিজের বাড়ির বিরুদ্ধে লিখলে তো নিজেদের সম্মান নষ্ট হয়।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও’র একটি ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আমাদের সম্মান বেড়েছে না কমেছে সেটা বিবেচ্য। সংবাদের আগে ইউএনওকে প্রকৃত বিষয়টা জানানো উচিত ছিল। কিন্তু সেটা করা হয়নি। এটা একটি চেয়ার। ইউএনও চেয়ারকে খাটো করাটা ঠিক না। আমি নিজেও প্রকৃত বিষয়টা জানার চেষ্টা করবো। ওই ব্যক্তি অভাবী হলে আমি নিজেই সহযোগিতা করবো।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জরুরাত সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মনিরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বৃন্দ।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপুর ইউনিয়নের বৃদ্ধ ফরিদ আহমেদ ৩৩৩ ফোন করায় জরিমানা হিসেবে ৭৫ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার বিষয়টি এখন নারায়ণগঞ্জের ‘টক অফ দা টাউনে’ পরিণত হয়েছে। সেই সাথে একটি অসহায় পরিবারকে এ ধরনের হয়রানি করার দায় কার- এ নিয়েও চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনও আরিফা জহুরা এবং কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আইয়ুব আলীর ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক হইচই পড়ে গেছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন কাশিপুর ইউনিয়ন এর দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকার একজন বাসিন্দা। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে সরেজমিনে হাজির হন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা। সেসময় গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জানতে পারি যিনি খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন করেছিলেন তিনি নিজেই একটি চারতলা ভবনের মালিক। নিছক দুষ্টুমির ছলে ফোন করেন। বিভ্রান্ত করায় তাকে ১০০ প্যাকেট খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী হলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম দেওভোগ এলাকার মৃত সুরুজ্জামান খানের ছেলে ফরিদউদ্দিন আহম্মেদ (৭৫)। তিনি শহরের নয়ামাটি এলাকার ‘আবুল গার্মেন্টস’ নামে হোসিয়ারী কারখানার শ্রমিক।
২২ মে বিকেলে সদর উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে ওইসব খাদ্য বিতরণ করা হয়। ১০০ জনকে দেওয়া সহায়তায় প্যাকেট ছিল ১০ কেজি করে চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি করে ডাল, সয়াবিন তেল, লবন ও পেয়াজ।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। উপজেলা প্রশাসন বাড়ির মালিক হিসেবে ফরিদউদ্দিন আহমদেকে জরিমানা করলেও প্রকৃতভাবেই পরিবারটি অসহায়।
এ বিষয়ে ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, চার তলা ভবনের দুই রুমের ফ্ল্যাটে আমি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করি। আর বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটে আমার আরো ৫ ভাই ও এক বোন বসবাস করে। এ বাড়িতে কোন ভাড়াটিয়া নেই। আমি হোসিয়ারীতে কাজ করি। মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন দেয়। এ টাকা দিয়ে মেয়ের পড়ালেখা, ছেলেটা শারীরিক প্রতিবন্ধী তাই তার ওষুধের টাকা, নিজের ওষুধ ও সংসার খরচ চলে না। তার নিজেরও দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। দুই চোখেই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তিনবার স্ট্রোক করেছেন। কোনো রকমের সঞ্চয় নেই তার। নিজের ওষুধ কেনারও পয়সা নেই। খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।
তিনি বলেন, ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দিলে খাবার সহায়তা দিবে। যার জন্য ৩৩৩ এর ফোন দেই। একদিন পর স্থানীয় কাশিপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফোন দিয়ে বলেন আপনি বাড়ির মালিক আপনার জন্য এ সহায়তা না। আপনি কেন চাইতে গেলেন? আমি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ক্ষমা চাইবেন।
এর দুই দিন পর ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করলে আমি ফোন দিয়েছি স্বীকার করি। মেম্বারের কথায় আমি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফোন দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাই। তখন তিনি ক্ষমা না করে ১০০ জনের মধ্যে খাবার বিতরনের জরিমানা করে। অন্যথায় ৩ মাসের জেল। সেজন্য আমি আজকে খাবার বিতরণ করি।’
ফরিদউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী হিরন বেগম বলেন, স্বর্ণের দোকানে মেয়ের গলার চেইন বন্ধক দিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। আর আশে পাশের আত্মীয় স্বজন, পরিচিতদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এ খাবার বিতরণ করছি।’
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি যদি সত্যিই অসহায় হয়ে থাকেন তাহলে ওনি যে টাকার ত্রাণ দিয়েছেন সেই টাকা উপজেলার ত্রাণ তাহবিল থেকে ফেরত দেওয়া হবে।’