নিশ্চুপ আ’লীগের সভাপতিদ্বয়, সরব দুই সম্পাদক

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হওয়ার পর এর নেপথ্যে উস্কানী দাতা হিসেবে সাংসদ শামীম ওসমানের নাম উল্লেখ করেছেন মেয়র আইভী। এরপরই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারিরা মেয়রকে নিয়ে বিষোদগার করছেন। পাল্টা বিষোগদার করছেন মেয়র আইভীর অনুসারিরাও। তবে নিশ্চুপ রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তবে দুই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল ও খোকন সাহা বেশ সরব রয়েছে। মেয়রের বিরুদ্ধে করা একাধিক কর্মসূচীতেও তারা দুইজন উপস্থিত ছিলেন।

গুঞ্জন রয়েছে, আগামী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আবু হাসনাত শহীদ বাদল ও খোকন সাহা সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি যৌথভাবে উদ্যোগ নিলে সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র আইভীর দ্বন্দ্ব নিরসন সম্ভব হতো। কিন্তু তারা দুইজনই নিশ্চুপ রয়েছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে দুই সাধারণ সম্পাদক মেয়রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কড়া সমালোচনা করে আসছেন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে শহরে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। বিক্ষোভ সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। কিন্তু মেয়র আইভী দাবী করছেন, সাংসদ শামীম ওসমানের উস্কানী এসকল কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। এনিয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই উত্তাপ যে কোন সময় সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে ধারণে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এরআগে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে হকার, শামীম ওসমানের অনুসারি ও মেয়র আইভীর অনুসারিদের মধ্যে ত্রিমূখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। মূলত সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র আইভীর মধ্যে থাকা বিরোধই সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের সেই সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। মূলত কোন ভাবেই নিরসন হচ্ছে না নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই পরিবারে দ্বন্দ্বের রাজনীতি। দীর্ঘদীন ধরেই নিরুত্তাপ থাকা উত্তর আর দক্ষিন মেরুর রাজনৈতিক উত্তাপ তৃনমূল নেতৃবৃন্দের মাঝে নতুন করে প্রভাব পড়েছে। অথচ নিশ্চুপ ভূমিকায় রয়েছেন আব্দুল হাই ও আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেনকে সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী দুইজনই গুরু মানেন। আর সেই গুরু দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের ঐক্যের সম্ভাবনা থাকলেও রহজ্যজনক কারণে নিশ্চুপ রয়েছেন গুরু আনোয়ার হোসেন। এমন অবস্থ্ায় জেলাবাসী মনে করেছেন, দীর্ঘদীন হলেও উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর রাজনৈতিক উত্তাপ নিরসন হতে যাচ্ছে। কিন্তু জেলাবাসীর এমন ভাবনা নিছক চিন্তা চেতনার ফলসূতি বলে প্রমান করেছেন নাসিক মেয়র আইভী।

সূত্রে জানা যায়, একদিকে খানসাহেব ওসমান আলী পরিবার, আরেকদিকে আলী আহমেদ চূনকা পরিবার। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এই দুই পরিবারের দ্বন্ধ অনেক দিনের। দুই পরিবারের এ বিরোধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বিব্রত হচ্ছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও। এতে লাভ হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের। খানসাহেব ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদা। আলী আহমেদ চূনকা মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাবা। ১৯৭২ সালে শহর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সময় ওসমান ও চুনকা পরিবারের বিরোধ আর চাপা থাকেনি। ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে আবারও দ্বন্দ্ব দেখা দেয় দুই পরিবারে। তার পর থেকে এই দ্বন্দ্ব আর দূর হয়নি। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও পরোক্ষে এই দ্বন্দ্ব-বিরোধ আজও রয়ে গেছে। ১৯৭৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনে আলী আহমেদ চুনকা আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত করেন খোকা মহিউদ্দিনকে। খোকা আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। তাতে সমর্থন ছিল ওসমান আলীর ছেলে এ কে এম শামসুজ্জোহা পরিবারের। শামীম ওসমানের বাবা এই শামসুজ্জোহা। রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, নানা ইস্যুতে এই দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেও বারবার প্রভাবিত করছে। বর্তমানে এই দ্বন্দ্বের একদিকে রয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী, অন্যদিকে শামীম ওসমান। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চান চুনকাকন্যা আইভী। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থন পান শামীম ওসমান। পর পর দু’বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে আইভী তার অবস্থান সংহত করেছেন। যদিও এসব ঘটনাপ্রবাহে দুই পরিবারের বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাদের এ বিরোধকে পুঁজি করে ফায়দা নিচ্ছে তৃতীয় পক্ষ। সাংসদ শামীম ওসমান বিগত সভা সমাবেশগুলোতে জেলাবাসীর উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করলেও নাসিক মেয়র আইভীকে নিয়ে কোন নীতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেননি। কিন্তু মেয়রের বিরুদ্ধে একের পর এক কর্মসূচীর পালিত হওয়ায় সাংসদ শামীম ওসমানকে দায়ী করছেন মেয়র আইভী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ