নারায়ণগঞ্জ মেইল: অভিভাবকহীন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিতর্কিত কর্মকান্ডে হতাশা বেড়েই চলছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। দিনকে দিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দায়সারা কর্মসূচি আর বিতর্কিত নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত প্রশ্রয়ের ফলে ত্য্গাী নেতাকর্মীরা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে করছে নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে ছাড়াই কোন রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচি দিলে দায়সারাভাবে কয়েকজন মিলে একটি ব্যানার নিয়ে চিপা গলিতে ফটোসেশন করেই বিদায় নেন। কয়েকটি কর্মসূচিতো তারা মহানগর ছেড়ে ফতুল্লায় নতুন কোর্টের সামনে গিয়ে পালন করেছে। আর সবচেয়ে হতাশ করেছে গত ১৭ ফেব্রƒয়ারি। এদিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নেতাকর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে ঝড় তুলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এড, সাখাওয়াত হোসেন খান। বিক্ষোভ মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর করে তুলে নারায়ণগঞ্জের রাজপথ। অথচ সভাপতি সেক্রেটারী বিহীন মহানগর বিএনপি প্রেসক্লাবের পিছনে ৫ মিনিট ব্যানার নিয়ে দাড়িয়ে কোনক্রমে দায়সারাভাবে কর্মসূচি পালন করে স্থান ত্যাগ করে।
এর আগেও গত ১১ জানুয়ারি একই কাজ করেছে তারা। এদিন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিলো বিএনপির। একই কর্মসূচি সকালে জেলা বিএনপি পালন করেছে ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কে দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত যান চলাচল বন্ধ রেখে আর বিকেলে মহানগর বিএনপি প্রেসক্লাবের পিছনের গলিতে কোন রকমে দাড়িয়ে দশ মিনিট বক্তব্য দিয়েই সটকে পরেছে।
সূত্রে প্রকাশ, গেলো বছরে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। করোনার লকডাউনের সময় থেকেই নিজেকে লকডাউন করে ফেলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালাম। অসহায় সাধারণ মানুষতো দুরের কথা, দলীয় নেতাকর্মীরাই কোথাও খুঁজে পাননি তাকে। আর সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালতো সুময় খারাপ বুঝে উড়াল দেন সুদুর আমেরিকায়। এখ নপর্যন্ত সেখানেই আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
করোনার লকডাউন চলাকালে মহানগর বিএনপির দুস্থ্য নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণের জন্যে আড়াইহাজার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ ১ লাখ টাকা দেন এটিএম কামাল আর আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে। সেই টাকা নিয়ে কেলেংকারীর সৃষ্টি হয় নেতাকর্মীদের মাঝে। কাশাল-টিপু সেই টাকা নেতাকর্মীদের না দিয়ে নিজেরাই কয়েকজনে মিলে ভাগ বাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ জানায় বঞ্চিত তৃণমূল।
এছাড়াও বছর জুড়েই একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতারা। সংগঠনের বিতর্কিত সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন সহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এবারের মহান বিজয় দিবসে মহানগর বিএনপির ব্যানারে ফুল দিতে দেখা গেছে বিতর্কিত নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে। সংগঠনের সহ সভাপতি পদ থাকলেও তিনি কখনো বিএনপির কর্মসূচি পালন করতেন না। বরং সরকারী দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমপি মন্ত্রীদের সাথেই তার সময় কাটতো। সরকারী দলের দলের একটি অনুষ্ঠানে তিনি মঞ্চে বসা অবস্থায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিলেও তিনি তা বেমালুম হজম করে যান, কোন প্রতিবাদ করেননি। তাছাড়া সরকারী দলের নেতাকর্মীদের সাথে ফুলের নৌকা হাতে তার ছবিও বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো। সর্বশেষ গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল সরাসরি দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং বিএনপির এজেন্টদের মেরে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই বিতর্কিত নেতা মুকুলকে মহানগর বিএনপির ব্যানারে ফুল দিতে দেখে তাই ক্ষোভ প্রকাশ করতে গেছে নেতাকর্মীদের। তাছাড়া বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ হারানোর পর থেকে বিএনপিতে ঘেঁষতে শুরু করেছেন এই সুবিধাবাদী নেতা। ইতিমধ্যেই তার পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ শহর। আর এসব কিছুকেই ভালো চোখে দেখছেন না নেতাকর্মীরা বরং কোনো অশুভ ইঙ্গিতই বলে ধারনা তাদের। আর এভাবেই বছর জুড়ে সমালোচনা সৃষ্টি করে গেছেন মহানগর বিএনপি নেতারা।