পুলিশী পাহারায় রাস্তা দখল করে তৈমূরের মানববন্ধন, রহস্য!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: গত কয়েক বছর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচি মানেই সেই চিরচেনা দৃশ্য। গেরিলা অপারেশনের মতো বিভিন্ন দিক থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেতাকর্মীরা এসে ব্যানার নিয়ে দাড়ানো মাত্র পুলিশ এসে বাঁধা দিয়ে ব্যানার কেড়ে নেয়া এবং লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া। মাঝে মাঝে প্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। এতে অনেক মামলায় আসামীও হয়েছেন বহু বিএনপি নেতা। আর তাই কেন্দ্রীয় কোন কর্মসূচি দিলেই বুক দুরুদুরু করতো নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতার্মীদের। রাজপথ ছেড়ে প্রেসক্লাবের পিছনের গলিতে গিয়েও নিস্তার পায়নি বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানেও তাদের তাড়া করেছে পুলিশ। অথচ সোমবার ১১ জানুয়ারি দেখা গেলো সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দৃশ্যপট। প্রধাণ নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের দাবীতে ঘন্টাকাল ব্যাপী মানববন্ধন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নব গঠিত আহবায়ক কমিটি। জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কের এক পাশ আটকিয়ে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই মানববন্ধনের কারনে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময়ে পুলিশকে দেখা গেছে মানববন্ধনস্থলের কাছে দাড়িয়ে পাহারা দিতে এবং কয়েকজন ট্রাফিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করছিলেন। আকষ্মিক পুলিশের এই বিপরীত আচরণে রহস্যের জন্ম দিয়েছে নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলে। সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার সকালে শুরু হওয়া এই মানববন্ধনে নেতাকর্মীদের মাঝে ছিলো না কোন শৃঙ্খলা। চরম বিশৃঙ্খলা আর হইচই চেচামেচির মাঝে সঞ্চালক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বারবার মাইকে নেতাকর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে মানববন্ধনে দাড়ানোর অনুরোধ জানালেও সেদিকে কোন প্রকার কর্ণপাত করতে দেখা যায়নি নেতাকর্মীদের।

মানববন্ধন চলাকালে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সমর্থকদের সাথে এড. তৈমূর আলম খন্দকারের সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের লোকজন হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরেন। তৈমূর অনুসারী জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য দুলাল হোসেনের সাথে কাজী মনির অনুসারী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নাসিরুদ্দিন ও তারাবো পৌর বিএনপির সেক্রেটারী আশরাফুল রিপনের হাতাহাতিতে মানববন্ধন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এ সময় জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে অসহায়ের মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে এড. তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন যে কতটা নির্লজ্জ আর অপদার্থ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে সে দেশের রেল মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। কারন সে দেশে সরকারের জবাবদিহিতা রয়েছে কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই। এই দেশে শুধু একজন মানুষকে খুশি রাখলেই সব কিছু চালানো যায়। সেই একজন হলেন প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার খুশির উপর এ দেশ চলছে। দেশের ৪২জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতি বরারবর তাদের পদ্যাগের আবেদন করেছে। এই ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিএনপির কোন সদস্য নয়, কোনো রাজনৈতিক দলেও সদস্য নয়। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে বলবো আপনি যদি শুধু আওয়ামীলীগের লাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই কিন্তু আপনি যদি সমগ্র দেশবাসীর রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন তাহলে আপনিও জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নন। জবাবদিহিতার প্রতি আপনার যদি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকে তাহলে আপনি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে দূর্নীতির অভিযোগ দেয়া হয়েছে তার সুষ্ঠ তদন্ত করবেন। তদন্তে যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে আপনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন আর যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে এই অভিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আপনাকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।

অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অযোগ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এবং অবিলম্বে তাদের পদত্যাগের দাবিতে জেলা বিএনপির আজকের এই মানববন্ধন কর্মসূচি। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে গত ১২ বছরে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার একটি নির্বাচনও সুষ্ঠ হয়নি। কোন নির্বাচনেই ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারেননি। দেশের জাতীয় নির্বাচন অবৈধ হয়েছে, স্থানীয় সরকারের সকল নির্বাচনও অবৈধ হয়েছে। আর তাই এ অবৈধ নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এই অবৈধ নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আরো কঠোর কর্মসূচি দাবি করছি, সেই কঠোর কর্মসূচিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এই অবৈধ নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগে বাধ্য করবো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, নাসির উদ্দিন, আব্দুল হাই রাজু, লুৎফর রহমান আব্দু, এড. মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন, জাহিদ হাসান রোজেল, নজরুল ইসলাম পান্না, সদস্য খন্দকার আবু জাফর, নজরুল ইসলাম টিটু, এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, শরীফ আহমেদ,মাহমুদুর রহমান সুমন, মোশারফ হোসেন, বশির উদ্দিন বাচ্চু, হাজী সেলিম হক, মোশারফ হোসেন, আশরাফুল আলম রিপন,জুয়েল আহমেদ, ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবু, দুলাল হোসেন,কাশেম ফকির, ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, আব্দুল আজিজ মাষ্টার, এম এ হালিম জুয়েল, এড. গুলজার হোসেন,শাহ আলম হিরা, নুরুন্নাহার বেগম, একরামুল কবির মামুন, শাহ আলম মুকুল, মোস্তাকুর রহমান, রিয়াজুল ইসলাম, রহিমা শরীফ মায়া, কামরুজ্জামান মামুন হামিদুর হক খান, বাকির হোসেন, আল মোজাহিদ মল্লিক, জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সহিদুর রহমান স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক রাসেল রানা, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ