নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় এখন পুরোপুরি নির্বাচনী আমেজ। জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন না হলেও বিএনপির আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন নিয়ে নির্বাচনে মুখোমুখি হচ্ছে দুটি প্যানেল। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আলোচিত আইনজীবী নেতা এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সমর্থীত প্যানেল ঠেকাতে অপর দুই আইনজীবী নেতা এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালাম সম্মিলিতভাবে প্যানেল ঘোষনা করেছেন। আর তাই এবারের আইনজীবী ফোরাম নির্বাচন হয়ে উঠেছে এড. সাখাওয়াতের সাথে তৈমূর-কালামের লড়াই।
সূত্রে প্রকাশ, বিএনপির আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ বহু পুরানো। তাই এবার সকল আইনজীবীর মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রীক পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালাম অনুসারী আইনজীবীরা। কারন আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের মাঝে তাদের গ্রহনযোগ্যতা প্রায় শূণ্যের কোঠায়। তাই ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে তাদের ভরাডুবির সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল খুঁজতে থাকেন তারা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার বিএনপির সিংহভাগ আইনজীবী নির্বাচনের পক্ষে থাকায় তাদের সে চেষ্টা ভেস্তে যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়।
আগামী ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচনে এড. সাখাওয়াত অনুসারী প্যানেলের বিপরীতে এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালাম অনুসারীরা একজোট হয়ে প্রার্থী নির্ধারণ করে। সাখাওয়াত অনুসারী প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে এড. সরকার হুমায়ুন কবীর, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. আবুল কালাম আজাদ জাকির, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এড. আজিজুল হক হান্টু, যুগ্ম সম্পাদক পদে এড. এইচএম আনোয়ার প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এড. ওমর ফারুক নয়ন।
অপরদিকে তৈমূর-কালাম অনুসারী প্যানেলে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সভাপতি পদে এড. আব্দুল হামিদ ভাষানী, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. আজিজ আল মামুন, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এড. সীমা সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক পদে এড. আনিসুর রহমান মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আলী হোসেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ার রাজনীতিতে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছেন বিএনপি’র দুই হেভিওয়েট আইনজীবী এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালাম। এক সময়ের দাপুটে এই দুই আইনজীবী নেতার স্বেচ্ছাচারিতা আর বিতর্কিত কর্মকান্ডের ফলে বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা ধারে ধীরে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন বলে জানা যায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে চেয়ারপার্সণের উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালাম দুজনই আইনজীবী হওয়ায় আদালতপাড়ার রাজনীতিতে সব সময়ই ছিলেন সক্রিয়। তবে একই দলের রাজনীতি করলেও তারা দুজন ছিলেন বিপরীত মেরুর বাসিন্দা।
নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় তাদের দুজনের ছিলো আলাদা বলয়। প্রতি বছর আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের আগে তৈমূর পন্থী ও কালাম পন্থী আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থানে থাকতেন। গত দুই বছর আগেও বার নির্বাচনের আগে প্যাণেল গঠন করতে গিয়ে তৈমূরকে নাজমূল হুদার প্রেতাত্মা বলে অভিহিত করেছেন কালাম ও তার অনুসারীরা, দিয়েছেন তৈমূর বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তব্য।
নারায়ণগঞ্জ আদালতে শক্ত অবস্থানে থাকা বিএনপি’র আইনজীবীদের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা আর দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করার কারনে এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালামের পাশ থেকে সরে আসতে থাকেন শহীদ জিয়ার আদর্শের আইনজীবীরা। আর নিজ নিজ বলয় সৃষ্টি করে আইনজীবীবের মাঝে বিরোধ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ধরা পরে যাওয়ায় অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পরেন এড. তৈমূর ও এড. কালাম। ফলে দুই মেরুতে থাকা দুই নেতা এবার নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আদালতপাড়ার নেতৃত্ব পুনরুদ্ধারে একজোট হয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু উদ্দেশ্য সৎ না হওয়ায় তাদের পাশে আর ভীড়ছেন না বিএনপি পন্থী সাধারণ আইনজীবীরা।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সণ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে গত ২৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় প্রতীকী অনশনের আয়োজন করেন এড. তৈমূর আলম খন্দকার। দুপুর বারোটায় করার কথা থাকলে ১ ঘন্টা পরে তার বলয়ের কয়েকজন আইনজীবী নিয়ে মাটিতে বসে প্রতিবাদ জানান তৈমূর। এ সময় তার সাথে যোগ দেন এড. আবুল কালাম। কিন্তু তাতেও কাজের কাজ তেমন একটা হয় না। এড. আবুল কালাম এসেও তৈমূরের অনশনে আইনজীবীদের টানতে ব্যর্থ হন। ১২০০ আইনজীবীর নারায়ণগঞ্জ আদালতে বসে দুই হেভিওয়েট বিএনপি নেতা সর্ব সাকুল্যে ১৯ জন আইনজীবী জড়ো করতে পারেন যা তৈমূর কালামের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ বলে মনে করেন সাধারণ আইনজীবীরা।
এরপর গত রমজান মাসে ফোরামের বর্তমান আহবায়ক এড. খন্দকার মাহবুবউদ্দিনকে এনেও আইনজীবীদের সমাবেশ ঘটাতে ব্যর্থ হন তৈমূর কালাম জুটি। তাদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিএনপির আইনজীবীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় তৈমূরের ডাকে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় আর আইনজীবীরা সাড়া দেননা।