নারায়ণগঞ্জ মেইল: একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে “রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই”। সেই প্রবাদটি যে কতটুকু সত্য তা বোঝা যায় নারায়ণগঞ্জের দিকে তাকালে। আজ যার সঙ্গে যার ভাব, কাল দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে বৈরীতা আবার পরশু গলায় গলায় ভাব। শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থ হাসিলের জন্যে নারায়ণগঞ্জের অনেক রাজনীতিবীদ ক্ষণে ক্ষণে আপনজন পাল্টান। এই যেমন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে নিজের ভাতিজি পরিচয় দেন। আইভীও আনোয়ার হোসেনকে চাচা সম্বোধন করেন। প্রথম সিটি নির্বাচনে এই চাচাকে নিয়েই নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে পরাস্ত করেন পরাক্রমশালী প্রার্থী শামীম ওসমানকে। দ্বিতীয় সিটি নির্বাচনের আগেই পাল্টে যেতে থাকে চাচা-ভাতিজির সম্পর্ক। শামীম ওসমানের সমর্থনে নিজেই মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আনোয়ার আর ভুলে যান ভাতিজিকে। ভাতিজিও চাচার পক্ষ ত্যাগ করে। কিন্তু অতি সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের একটি ঘটনায় শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে বিরোধের সূত্রপাত হয় আনোয়ার হোসেনের। আর এ বিরোধে চাচার প্রতি সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে আবারো চাচা আনোয়ার হোসেনের পাশে এসে দাড়িয়েছেন ভাতিজি আইভী।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যিনি তিনটি আসনের সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে এই গুরু আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বলয়ে সম্পৃক্ত থেকে নিজের ফায়দা লুফে নিয়েছেন। যার অংশ হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিতও হয়েছিলেন।
সূত্রে প্রকাশ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা ছিলেন। মূলত সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকের সামনে হোসেনের নামফলক ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টি যুগ্ন মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার বিরুদ্ধে। আনোয়ার হোসেনের পক্ষে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়েছিল। তবে আনোয়ার হোসেনের পক্ষে আয়োজিত প্রতিটি কর্মসূচীই সফল করতে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বলয়ের নেতাদের। পরোক্ষভাবে আনোয়ার হোসেনের পাশে থেকে কর্মসূচী সফল করতে কাজ করেছেন মেয়র আইভী। মূলত সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা ওসমান পরিবারের বলয়ে থাকায় মেয়র আইভী আনোয়ান হোসেনের পাশে ছিলেন। অথচ এই আনোয়ার হোসেনই গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পেতে মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বিষোদগারসহ প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে সেলিনা হায়াত আইভীকে বিজয়ী করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আইভীকে নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর নাসিক নির্বাচনে আনোয়ার হোসেনই মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দেয়। ঐ সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, নাসিক নির্বাচনে বিএনপি-জামাতের সাথে আতাঁত করে শামীম ওসমানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিল আইভী। আনোয়ার হোসেনের সেই বক্তব্যের পর অনেকটা নিশ্চুপ ভূমিকায় ছিলেন মেয়র আইভী। পরে আনোয়ার হোসেন দলীয় প্রতীক না পাওয়ায় শুরুকে খুশি করতে বিনা ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার ব্যবস্থা করেন সাংসদ শামীম ওসমান। কিন্তু জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ফের ভোল পাল্টে ফেলেন আনোয়ার হোসেন। কিছুদিন পরই ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন। তবে এতোদিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আনোয়ার হোসেনের পাশে দাঁড়াননি মেয়র আইভী। কিন্তু সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ফটকের সামনে নামফলক ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে আনোয়ারের পাশে ছিলেন মেয়র আইভী বলয়ের নেতারা। তবে আনোয়ারের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আওয়ামীলীগকে ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা বিরোধী দল’ বক্তব্য দিয়ায় দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে। জাহাঙ্গীর আলম আইভীর ঘনিষ্টজন হিসেবেই পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে মেয়রের পক্ষে সাফাই গাইতেন তিনি।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতির চিঠি ইস্যুর পর জাহাঙ্গীর আলমকে অভিযোগ করেছেন এটা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। তিনি বলেছেন, সভাপতি আব্দুল হাইয়ের ধারভার নাই। অভিজ্ঞ মহল বলছে, রাজনীতিতে শেষ বলতে কোন কথা নেই। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঠিক চর্চা হচ্ছে না। রাজনীতিকরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত রয়েছেন।