নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি প্রায় চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো, শুধু বাকী ছিলো ঘোষনা দেয়া। এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে আহবায়ক করে গঠিত হওয়া নতুন কমিটি ঘোষনার আগ মুহুর্তে ঝুলে গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি গণমাধ্যমে তৈমূরের কুকর্মের ইতিহাস ছাপা হওয়ায় আটকে গেছে সেই কমিটি। এখন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা তৈমূরের বিকল্প ভাবছেন, এমনটাই জানা গেছে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে।
জানা যায়, অন্ধ ও বধীর সংস্থার চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এড. তৈমূর আলম খন্দকার কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন, তাছাড়া বিআরটিসির চেয়ারম্যান তৈমূরের বিশাল দূর্নীতির খবর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রথম শ্রেণির দৈনিকে লাগাতার ছাপা হতে থাকে। তৈমূর আলম খন্দকারের এসব কুকীর্তির খতিয়ান পৌছে গেছে বিএনপির হাই কমান্ডের কাছেও। দলের এমন ক্রান্তিলগ্নে তৈমূরের মতো দূর্নীতিবাজের হাতে জেলা বিএনপির দায়িত্ব তুলে দিতে তাই দ্বিতীয়বার ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে তৈমূরের বিকল্প হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে আহবায়ক আর আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমকে সদস্য সচিব করে নতুন কমিটির খসড়াও নাকি তৈরী হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে একাধীক সূত্র।
জানা যায়, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় নির্দেশে বাতিল করে দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি। তৎকালীণ সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সীমাহীন ব্যর্থতার কারনে কমিটি বাতিল হওয়াটা ছিলো সময়ের দাবী। সেই সাথে স্থানীয় মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠনের প্রকৃয়াও চলছিলা বেশ জোরেশোরে। সম্ভাব্য পদ প্রত্যাশী নেতারাও তৎপর ছিলেন কেন্দ্রে লবিং কিংবা স্থানীয় জনসমর্থন আদায়ে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের ছোবলে লন্ডভন্ড হয়ে পরে গোটা মানবসভ্যতা। সেই সাথে আটকে যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের সকল কার্যক্রম।
সূত্রে প্রকাশ, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি আর অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষনা করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটি। মূলত ব্যবসায়ী পরিচয়ের নেতা কাজী মনিরকে সভাপতি আর যুবদল থেকে সরাসরি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক পদে প্রমোশন পান অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। কমিটি গঠনের পরে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আশার আলো দেখতে পান নতুন করে উজ্জীবিত হওয়ার জন্য। কিন্তু জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান আর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ তাদের সেই আশায় গুড়েবালি দেন। প্রায় বেশীরভাগ কর্মসূচিতেই থাকেন অনুপস্থিত, আর মাঝে মাঝে দুএকটি কর্মসূচিতে এলেও তড়িঘড়ি করে নেতাকর্মীদের ফেলেই পালিয়ে যান।
বিএনপি চেয়ারপার্সণ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে ডাকা মানববন্ধনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতেও আসেননি এই ব্যবসায়ী নেতা। সভাপতির অনুপস্থিতে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে মানববন্ধন করেন নেতাকর্মীরা। দায়িত্ব পাওয়ার পরে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা এবং বিপদে আপদে পাশে থেকে তৃণমূলকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে নানা প্রকার বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে দলের ভিতরে বিভাজনের সৃষ্টি করে।
এদিকে গত বছরের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ২০৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়। যদিও কমিটি অনুমোদন করা হয় ১৩ মার্চ কিন্তু রহস্যজনক কারনে তা ২৭ মার্চ প্রকাশ করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। গুঞ্জণ শোনা যায়, এ সময়ের মধ্যে কমিটি নিয়ে বিশাল অংকের পদ বানিজ্য করেন সভাপতি সেক্রেটারী। তাছাড়া কোন প্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়াই ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি ঘোষনা নিয়েও বিতর্কের জন্ম দেন এ দুজন।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র কমিটি আড়াই বছর পার করেছে নানা সমালোচনা আর বিতর্কের গ্লানি নিয়ে। আড়াই বছরে কমিটির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে সবচেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন বাগানোর সময়েই শুধু, অন্য সময়ে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে খুব একটা দেখা মিলেনি এই ব্যবসায়ী নেতার। মাঝে মধ্যে যা দুএকটা কর্মসূচিতে এসেছেন, সেখানেও নেতাকর্মীদের ফেলে মোটর সাইকেলে চড়ে পালিয়ে গেছেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদও গত ৩০ অক্টোবরে জেলা বিএনপি’র কর্মসূচি শুরুর প্রাক্কালে শহরের চাষাঢ়া লুৎফা টাওয়ারের সামনে পুলিশের ধাওয়ায় নেতাকর্মীদের ফেলে পালিয়েছেন, যদিও শেষ রক্ষা হয়নি তার, দৌড়ে তাকে ধরে ফেলে পুলিশ। এছাড়াও চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় পুলিশের ধাওয়ায় নেতাকর্মীদের ফেলে রেল লাইন দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেছেন সংগঠনের সহ সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল।
নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে রেখে নিজের স্বার্থ চিন্তা করে পালিয়ে যাওয়া এসব নেতাদের নেতৃত্ব আর মানতে চাইছিলো না নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র তৃণমূল। দলের এই চরম দু:সময়ে এসব স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী নেতাদের সরিয়ে দলের বিপর্যয়ে এগিয়ে আসা নেতাদের হাতে জেলা বিএনপি’র নেতৃত্ব দেখতে চায় বিএনপি’র কর্মী সমর্থকরা। ফলে কেন্দ্র থেকেই ভেঙ্গে দেয়া হয় এই ব্যর্থ কমিটি।