পিআর পদ্ধতির কড়া সমালোচনায় গিয়াস-সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মেইল: বাংলাদেশ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির কড়া সমালোচনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গিয়াস উদ্দিন এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। শনিবার (৫ জুলাই) পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  তারা এই সমালোচনা করেন।

এদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ৮ নং ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক এমপি মোঃ গিয়াসউদ্দিন এবং সদর থানার ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তারা দুজনেই তাদের বক্তব্যে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সেইসাথে পিআর পদ্ধতির কড়া সমালোচনা করেন।

৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরম বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পিআর পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে সেই নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ। একটা দল ৫ আগস্টের পরে মনে করেছিলো তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে ততই তারা বুঝতে পারতেছে ভোটের মাঠে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই তারা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য এই নতুন নাটক সাজিয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষ নির্বাচন নিয়ে আর কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেবে না। আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবো।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, যারা সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছেন তাদেরকে বলবো, এই সংস্থার কাজ আরো দুই বছর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষণার মাধ্যমেই শুরু করে দিয়েছিলেন। আপনারা যা ২০২৫ সালে করতে চাইছেন, তা আমাদের নেতা তারেক রহমান আরো দুই বছর আগেই শুরু করেছেন। ৫ আগস্টের পর গত এক বছরে অনেক সংস্কার হয়েছে। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা পালিয়ে গিয়েছেন। যারা পালাতে পারেননি তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা কর্মচারী শেখ হাসিনার দোসর ছিলো তাদেরকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। নতুন অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সে সকল সংস্কার কাজের গতিকে আরো ত্বরান্বিত করবে। তাই আমি বলবো নির্বাচন নিয়ে কোন তালবাহানা করবেন না।

তিনি আরো বলেন, গত জুলাই আগস্টে ৩৬ দিনের আন্দোলনে এদেশের মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছে কোনো স্বৈরাচারী সরকার আর এদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কেউ যদি জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাহলে তার পরিণতি সেই খুনি হাসিনা সরকারের চেয়েও ভয়াবহ হবে। তাই সবাই সতর্ক হয়ে যান। এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না।

গত তিনটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। তিনটি অবৈধ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেফতার হয়েছেন এবং তারা স্বীকার করেছেন দিনের ভোট রাতে দেয়া হয়েছিলো। মানুষের ভোটের অধিকারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিলো। মানুষ তার পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে চায়। পিআর পদ্ধতি কথা এদেশের মানুষ কখনো শোনেনি। এই নিয়ম সম্পর্কে এদেশের মানুষের কোন ধারণাই নেই। এই নিয়ম ইহুদী-খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলোতে চলমান আছে। আর বাংলাদেশ হচ্ছে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এখানকার মানুষ ধর্মভীরু। এখানে ইসলামী আইন-কানুন চালু না করে জোর করে নতুন কিছু চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না। এই সরকার প্রথমে বলেছিলো ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেবে। পরে বলেছে ফেব্রুয়ারিতে দেবে। এখন যদি নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার ছলনার আশ্রয় নিয়ে অধিক সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে তাহলে দেশের মানুষ আবার রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। তাই সুষ্ঠ অবাধ নির্বাচন সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে। দেশের বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকার এসে সম্পাদন করবে।

১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, গত ৫ আগস্টের পর দেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব হল দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু কিছু দল আছে যারা এর আগেও আমাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। তারা এখন আর নির্বাচন চায়না তারা চায় দুর্বল নির্বাচন। এই ইসলামী দলসহ কিছু দল গুলোর মাঠ পর্যায়ে ভোট নাই, তারা এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। কারন তারা যানে যদি ভোট হয় তাহলে তারা একটি সিটও পাবে না এবং ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তার জন্যই দেশের ৫৫ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ ১৪টি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের ঘোষণা করেছেন। বিএনপি ক্ষমতা আসলে তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমান বলেছেন আমরা ক্ষমতায় গেলে একলা দেশ শাসন করবো না। সব দলকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ পরিচালিত করা হবে। কিন্তু আমাদের সাথে থাকা কিছু দল এখন তার বিরোধিতা করছেন। আমাদের আন্দোল সংগ্রামকে তারা ভূলন্ঠিত করতে চায় এবং তারা জুলাই বিপ্লবের অর্জিত স্বাধীনতাকে কিলিং করতে চায়। জুলাই বিপ্লবের সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে ৫৫টি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আমাদের বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার ও নির্যাতন সহ্য করেছে। আর আপনারা কেউ কেউ একটি মামলা খেয়ে লাফালাফি করছেন। আর আজকে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপির ষড়যন্ত্র করে কেউ পার পাবেন না। এদেশের মানুষ বিএনপির বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান শীগ্রই দেশে ফিরবেন। তখন দেখবেন দেশের ১০নাম্বার বিপদ সংকেতের মতন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে এয়ার পোর্টে স্বাগতম জানাবে। সুতরাং যারা দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে যড়যন্ত্র করছেন আপনারা সাবধান হয়ে যান। সেই সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ