জেলা বিএনপির আলোচনায় মামুন-রাজিব

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বত্রই নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে পরিবর্তন আসছে জেলা বিএনপিতে। জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের কমিটি বিগত সময় আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় খুব শীঘ্রই এই কমিটি ভেঙে দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে এবং কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।


এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে আলোচনায় রয়েছেন বিগত কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এবং সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় মামুন মাহমুদ এবং মাসুকুল ইসলাম রাজীবের উপরই আস্থা রাখতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা।


সূত্রে প্রকাশ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলন সংগ্রামে যখন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা তখন পদে না থেকেও নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে ফের আলোচনায় চলে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নিজে রাজপথে নেমেছেন পাশাপাশি মামলা হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদেরও খোঁজ খবর নিয়েছেন। আর তাই বিদ্রোহী মামুন মাহমুদ এখন তৃণমূলের সাথে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছেন।


অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বের ব্যর্থতা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। দলের চরম গুরুত্বপূর্ন সময়ে গোলাম ফারুক খোকন শুধু নিস্ক্রিয়ই থাকেননি বরং সরকারী দলের সাথে মিলে বিএনপির নেতাকর্মীদেও হেনস্তা করেছেন। তাই খোকনের পরিবর্তে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবকেই তাদেও পছন্দ।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৭ জুন অনুৃষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন দুইজন। একজন ছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন ও আরেকজন তখনকার যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব।


এই দুজনের মধ্যে গোলাম ফারুক খোকন রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। তিনি এতদূর এসেছেন দীপু ভুঁইয়ার কাঁধে চড়ে। খোকন হচ্ছে জেলা বিএনপিতে দীপু ভুঁইয়ার ড্যামি প্রার্থী। রূপগঞ্জের রাজনীতিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে চলেন দিপু ভূঁইয়া। আর তাই তিনি এবং তার অনুগত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই বললেই চলে আর জেলখানার চার দেয়ালে কখনোই বন্দি থাকতে হয়নি দীপু ভূঁইয়া কিংবা গোলাম ফারুক খোকনকে।


নেতাকর্মীদের মতে, গত ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এসময় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে খুব একটা দেখা মিলেনি গোলাম ফারুক খোকনের। বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর টাকার জোরে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন খোকন। সেই নেতার আশীর্বাদেই হয়েছিলেন যুবদলের আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ন পদ।


অপরদিকে আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের রয়েছে বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের রাজনীতির আইকন ধরা হয় রাজীবকে। সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাসুকুল ইসলাম রাজীবের আছে বিশাল এক কর্মী বাহিনী, যাদেরকে নিয়ে বিগত সময়ে রাজপথে আন্দোলনের ঢেউ তুলেন রাজিব। আর এসব কারণে সরকারি দল ও পুলিশের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন রাজিব। প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার আসামি রাজিব জেল খেটেছেন অসংখ্যবার। এতো কিছুর পরেও রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি বরং আরো বলিষ্ঠ হয়ে ফিরে এসেছেন। আর তাই রাজিবের মত সাহসী আর কর্মীবান্ধব নেতাকেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম পছন্দ ছিলেন মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের।


তৃণমূল মনে করে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে নির্বাচন হলে সাধারণ সম্পাদক পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো গোলাম ফারুক খোকন ও মাসুকুল ইসলাম রাজিবের মধ্যে। এমনকি রাজিবের জয়ের সম্ভাবনাই ছিলো বেশি। খোকনের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে রূপগঞ্জের ধনকুবের দিপু ভূইয়া টাকার বস্তা নিয়ে ছোটেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দরবারে। দিপু ভূইয়ার টাকা পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাও রাজিবকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে একের পর এক চেষ্টা চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে দল থেকে বহিস্কারের হুমকি দিয়ে সম্মেলনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। দলের স্বার্থে দেশের স্বার্থে রাজিব সব কিছু মেনে নেন। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি তার ভক্ত সমর্থকরা। টাকার কাছে রাজপথের অবদানকে হারতে দেখে তৃণমূলের পক্ষে মেনে নেওয়াও সম্ভব ছিলো না। আর এভাবেই রাজিবের মতো দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতা থাকার পরেও খোকনের মতো একজন নিস্ক্রিয় লোক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়ে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র টাকার জোরে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ