নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনার পর থেকেই দুটি গ্রুপ বিরোধীতা শুরু করে। মূল কমিটির কর্মসূচিতে না এসে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করেছেন, এমনকি পাল্টাপাল্টি কমিটিও দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিদ্রোহীদেও কোনো কাজেরই তোয়াক্কা করেননি জেলা ও মহানগর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তারা হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কাজে মনোযোগ দিয়ে প্রতিটি ইউনিট কমিটি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সাজিয়ে ফেলেছেন। জেলা বিএনপি ইতিমধ্যেই নিজেদের সম্মেলনও শেষ করে ফেলেছেন। এখন মহানগর বিএনপি তাদের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মূলধারার এই দাপটে শুরুতে শত চেষ্টা করেও শেষে এসে হাল ছেড়ে দিয়ে দৃশ্যপট থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছেন বিদ্রোহী গ্রুপের নেতারা।
সূত্রে প্রকাশ, গত ১৫ নভেম্বর ঘোষনা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি। সাবেক এমপি মো: গিয়াসউদ্দিনকে আহবায়ক এবং জেলা যুবদলের আহবায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ঘোষিত কমিটিতে অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে করা হয় ১ম যুগ্ম আহবায়ক। কমিটি ঘোষনার পর থেকেই বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: গিয়াসউদ্দিন সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেন। দলের এই চরম ক্রান্তিকালে নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্ব সংঘাত ভুলে সবাইকে এক প্লাটফরমে এসে কাজ করার আহবান জানান তিনি। কিন্তু গিয়াসউদ্দিনের সেই ডাকে সাড়া দেননি মামুন মাহমুদ। জেলা বিএনপির প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতেই তিনি থেকেছেন অনুপস্থিত। এছাড়া কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি বিএনপির কিছু বিপথগামী নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আলাদা ব্যানের শোডাউন করেন। ফলে জেলা বিএনপিতে সৃষ্টি হয় বিভেদ বিভক্তি আর নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয় হতাশা। নতুন কমিটি পেয়ে নতুন উদ্যোমে কাজ করার পরিবর্তে নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তির বীজ রোপন করতে শুরু করেন কুচক্রি নেতা মামুন মাহমুদ।
তৃণমূলের মতে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের মাথাব্যাথার কারন হয়ে উঠেছেন মো: গিয়াসউদ্দিন। গিয়াসউদ্দিনকে জেলা বিএনপির দায়িত্ব দেয়ার পর থেকেই নানাভাবে তাকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিতে থাকেন সাংসদ শামীম ওসমান। তাছাড়া কমিটি পেয়ে গিয়াসউদ্দিন সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন এবং ইউনিট কমিটিগুলোতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন। ফলে শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে এ অঞ্চলের বিএনপির কমিটিগুলো। যে কারনে গিয়াসউদ্দিনকে দমাতে মরিয়া হয়ে উঠেন শামীম ওসমান এবং যে কোনোভাবে গিয়াসউদ্দিনের দূর্গে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। আর এই কাজের প্রথম ধাপ হিসেবে মামুন মাহমুদের মাধ্যমে জেলা বিএনপির ব্যানার আলাদা করে ফেলা হয় এবং নেতাকর্মীদের মাঝে ভুল ম্যাসেজ সরবরাহ করা হয়। শামীম ওসমানের ওসমানের প্রেসক্রিপশনেই মামুন মাহমুদ জেলা বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। কারন ইতিপূর্বে মামুন মাহমুদকে “একজন ভদ্রলোক” আর গিয়াসউদ্দিনকে “খুনি” উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমান।
অপরদিকে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ঘোষনা করা হয় ৪১ সদস্যের নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি। এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক এবং এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষনার পর থেকেই কমিটির বিরোধীতা করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সবচেয়ে বিতর্কিত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। কমিটি ঘোষনার কয়েকদিনের মধ্যেই বহিস্কৃত বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসভবনে গিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন মুকুলের নেতৃত্বে ১৪ জন বিএনপি নেতা। এরপর থেকে মুকুলের নেতৃত্বে কিছু বিশৃঙ্খল নেতাকর্মী আলাদা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দলের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করতে থাকে। দলের এই চরম ক্রান্তিকালে যখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন তখন সরকারী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দলের মাঝে বিভেদ বিভক্তি সৃষ্টির পায়তারা করছেন মুকুল।
ইতিপূর্বে মুকুলের অতীত কর্মকান্ডের ফলশ্রুতিতে তৃণমূল মনে করছে স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমানের প্রেসক্রিপশনেই বিএনপিকে দুর্বল করতে মাঠে নেমেছেন মুকুল। সেলিম ওসমানের আজ্ঞাবহ এই বিএনপি নেতা দলের ঐক্য বিনষ্ট করতে মহানগর বিএনপির আওতাধীন তিনটি ইউনিট কমিটির পাল্টা কমিটি ঘোষনা করেন। মুকুলের এই কাজে ফুঁসে উঠে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কারন তারেক রহমানের দেয়া কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কাউকে তারা মেনে চায় না। আর এসময়ে দলের ঐক্য বিনষ্ট করার চেষ্টাকে তারা ভালো চোখেও দেখছেনা। তৃণমূলের সর্বাত্মক প্রতিরোধের মুখে হাল ছেড়ে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান বিদ্রোহী গ্রুপের নেতারা।