উড়ে এসে জুড়ে বসছেন আজাদ!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম আজাদের উত্থান ঘটে এক এগারো পরবর্তী সময়ে। এর আগে রাজনীতিতে তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এই হিসেবে তাকে অনেকেই হাইব্রিড নেতা হিসেবেই মনে করেন। তবে এই হাইব্রিড নেতাই এখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে নিজের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। নিজ এলাকা আড়াইহাজার ছাড়াও শহরের রাজনীতিতেও কলকাঠি নাড়ছেন আজাদ। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোতে একটি আলাদা বলয় সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন বলেও অভিমত অনেকের। কয়েক বছর আগেও যাকে আড়াইহাজারের রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে আধিপত্য সৃষ্টি করতে দেখে তাই তৃণমূলের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা। তৃণমূল মনে করে রীতিমত উড়ে এসে জুড়ে বসছেন নজরুল ইসলাম আজাদ।

 

তৃণমূলের দাবি, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হতো প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সবসময়ই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সে চিত্র এখন অনেকটাই মলিন হয়ে পরছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সেই আগ্রসী রূপ এখন আর নেই। কমিটি বানিজ্য আর দ্বন্দ কোন্দলের কারনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন খাদের কিনারে পৌছে গিয়েছে। আর এ দুরবস্থার জন্যে নেতাকর্মীরা দায়ী করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নব্য কিংমেকার নজরুল ইসলাম আজাদকে। আজাদের ডুয়েল পলিটিক্সের শিকার হয়ে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আর সুবিধাবাদীরা তাদের জায়গা দখল করছে। ফলে দুর্বল হয়ে পরছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো, ভেঙ্গে পরছে চেইন অব কমান্ড।

 

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী শর্মিলি রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন ধুরন্ধর আজাদ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

 

সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম নজরুল ইসলাম আজাদ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের বাড়ি আড়াইহাজার হলেও সমগ্র নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তিনি। আর এ কারণে নারায়ণগঞ্জে যেখানেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি হচ্ছে, সেখানেই কিং মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন আজাদ। আজাদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কোনো সংগঠনের ইউনিট কমিটিও। ফলে সর্বত্র এখন আজাদ আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে নজরুল ইসলাম আজাদের পরিচয় কমিটি ম্যাকার হিসেবে। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনের সময় হলেই নজরুল ইসলাম আজাদ দোকান খুলে বসেন এবং বিভিন্ন দামে পদ-পদবী কেনাবেচা করেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এজন্য কমিটি বাণিজ্যের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি নিয়ে একাধিকবার আজাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলো বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা, আজাদকে করেছিল লাঞ্ছিত।

 

এদিকে নজরুল ইসলাম আজাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে সরকারি দলের উপর মহলেও। যে কারণে আজাদের কথার বাইরে গেলে প্রশাসন দিয়ে হেনস্তা করান বিএনপি নেতাকর্মীদের- এমন গুঞ্জন রয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। আর তাই আজাদের পছন্দমত লোকজনকেই দেয়া হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আবার যারা কমিটিতে আসতে চাইছেন তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন আজাদের দরবারে। কমিটি বাণিজ্য আগে গোপনে হলেও আজাদের কল্যাণে না এখন ওপেন সিক্রেট। আজাদ খুশি থাকলে কমিটিতে পদ মিলবে, তানাহলে মিলবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ