নারায়ণগঞ্জ মেইল: বাংলাদেশের রাজনীতি এখন নির্বাচন কেন্দ্রীক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে সরকারী দল আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান আবারো এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা ্এক রকম প্রায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে শামীম ওসমানের প্রতিপক্ষ হিসেবে কে বেশী চ্যালেঞ্জিং হতে পারেন সে নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে শামীম ওসমানকে বেকায়দায় ফেলে জয় ছিনিয়ে আনার মতো প্রার্থী কে হতে পারেন, সে নিয়ে ভোটারদের মাঝে চলছে বিচার বিশ্লেষন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে চেষ্টা করবেন তিন হেভিওয়েট নেতা। এরা হলেন সাাবেক সংসদ সদস্য মো: গিয়াসউদ্দিন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে এ আসন থেকে একবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা মো: শাহ আলম ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এই তিনজনই এ মুহুর্তে বেশী আলোচনায় রয়েছেন। এদের মাঝে কে শামীম ওসসমানের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম তা নিয়েই বিএনপি নেতাকর্মী থেকে শুরু করে এই আসনের ভোটারদের মাঝে হচ্ছে মূল আলোচনা।
সূত্রে প্রকাশ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো: গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে এ আসনে শামীম ওসমানকে পরাজিত করার অভিজ্ঞতা। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মো: গিয়াসউদ্দিন নারায়য়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও এ নির্বাচনের কিছুদিন আগে পর্যন্ত গিয়াসউদ্দিন আওয়ামীলীগেরই প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে তিনি নির্বাচনের কিছুদিন আগে বিএনপিতে যোগ দেন এবং বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।
সূত্র বলছে, ব্এিনপিতে যোগ দিয়ে শামীম ওসমানকে হারিয়ে এমপি হওয়া গিয়াসউদ্দিনকে নিয়েও বিতর্ক রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গণে। তিনি এমপি হওয়ার পরে অনেক ত্যাগী বিএনপি নেতাকে কোনঠাসা করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে তৎকালীন ডাকসাইটে যুবদল নেতা মমিনুল্লাহ ডেভিড ও তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যার পিছনে গিয়াসউদ্দিনের হাত রয়েছে বলে মনে করেন অনেক বর্ষীয়ান বিএনপি নেতা। তাছাড়া দল ক্ষমতা ছাড়ার পরে গিয়াসউদ্দিন নিজেকে খোলসের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে এককবারেই অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের হামলা মামলায় দিশেহারা অবস্থা অথচ এ সময়টাতে মিটিং মিছিলে খুব একটা দেখা মিলেনি সাবেক এ্ই সংসদ সদস্যকে। তবে এতো কিছুর পরেও ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় মো: গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিএনপির নেতাকর্মীরা মেেন করেন বাকিদের চেয়ে গিয়াস্উদ্দিনের রাজনৈতিক সক্ষমতা অনেক বেশি। দলীয় ভোট ছাড়াও নিরপেক্ষ অনেক মানুষের পছন্দে রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে এ অঞ্চলে শামীম ওসমান বিরোধীদের প্রথম পছন্দ মো: গিয়াসউদ্দিন। তাদের মতে এই আসনে শামীম ওসমানকে ঠেকানোর সামর্থ রয়েছে গিয়াসউদ্দিনেরই, বাকিরা হবে ড্যামি ক্যান্ডিডেট।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসন থেকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নির্বাচন করেছিলেন এ অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: শাহ আলম। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন তিনি। যদিও তিনি নির্বাচনের আগে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। কল্যান পার্টি নামমক একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত শাহ আলমকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো মূলত তার টাকার জোরেই- এমনটাই মনে করেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। যদিও পরবর্তীতে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব পদ দখল করেন। তবে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্র্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপির সকল পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে দুরে সরে যান। এতো কিছুর পরেও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় রয়েছে মো: শাাহ আলমের নাাম এবং বিশাল টাকার ভান্ডারের কারনে তা মিলেও যেতে পারে বলে মনে ককরেন অনেকে। তবে শামীম ওওসমাানের মতো হেভিওয়েট নেতার বিপক্ষে শাহ আলম কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে।
একই আসনে বিএনপির মনোনয়নে এবার সবচেয়ে বেশী আলোচিত নাম অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য সচিব এই শিক্ষাবীদ নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের জোর দাবিদার। বিশেষ করে গত কয়েক বছরের সরকার বিরোধী আন্দোলনে মামুন মাহমুদের ছিলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মিটিং মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের হামলা মামলার শিকার হতে হয়েছে তাকে অনেকবার, জেলও খেটেছেন বহুদিন। তাই মনোনয়নের তালিকায়য় তার নামটা বেশ জোরেশোর্ইে আলোচিত হচ্ছে। তবে মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগও কম নেই নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে জেলা বিএনপির অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিশাল অংকের বানিজ্যের অভিযোগ এই নেতার বিরুদ্ধে। টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের কমিটিতে পদ দিয়েছেন মামুন মাহমুদ আর রাজপথের ত্যাগী নেতাদের করেছেন বঞ্চিত। তাছাড়া বিএনপিতে তার বিরোধী মতকে দমন করতে গিয়ে অনেক যোগ্য লোককেও তিনি মাইনাস করে দিয়েছেন। তাই বিএনপির তার জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বিতর্কেরও শেষ নেই। তাই শামীম ওসমানের মতো জাঁদরেল নেতাকে মোকাবেলা করতে বিএনপিতে নিজের অবস্থান কতটা পাকাপোক্ত করতে পেরেছেন মামুন মাহমুদ সেটাই এখন দেখার বিষয়।