নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে কোটি টাকা বাজেটের মিশন হাতে নিয়েছেন কমিটিরই একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ধনাঢ্য বাবার সন্তান নামে যিনি সমধীক পরিচিত। কথিত আছে তাকে যদি কেউ নাম জিগ্যেস করে তবে সে উত্তর দেয় আমার বাবার নাম অমুক। সেই অমুক বাবার সন্তানের টাকায় গত কয়েক বছর নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সবচেয়ে ত্যাগী আর নির্যাতিত ছাত্র নেতা মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগেছে রাজপথে অনুপস্থিত কিছু বিপথগামী ছাত্র নেতা। সারাদেশে ছাত্রদলের ইউনিট কমিটি গঠনের প্রকৃয়া চলমান পর্যায়ে থাকাবস্থায় কেন্দ্রে অভিযোগ প্রদানসহ নানাভাবে রনিকে অপদস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে চক্র। অথচ যারা রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করেছেন বা বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রীতিমত হাস্যকর। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামতো অনেক দুরের বিষয়, তাদের চেহারাটাও অনেকের দেখতে পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে জেলা ছাত্রদল সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে সামনে থেকে লড়াই সংগ্রাম করেছে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সে সময় দলের মধ্যে ছিলো শৃঙ্খলা, নেতাকর্মীদের মাঝে ছিলো আন্তরিকতার সম্পর্ক। ফলে তারা একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করে গেছে, নিজেদের মাঝে কোনরূপ বিরোধের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু গত বছরের জুনে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষনার পর থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। আর এ জন্য তৃণমূল দায়ী করেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজিবকে। শিল্পপতি বাবার টাকার জোড়ে সজিব জেলা ছাত্রদলে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। আর এর অংশ হিসেবে সভাপতি মশিউর রহমান রনির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছেন এবং দলীয় কর্মসূচিগুলো আলাদা পালন করেছেন। শিল্পপতি বাবার টাকার নীচে জেলা ছাত্রদলকে চাপা দিয়ে নিজে সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজিব। যার ফলে দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে আর জেল জুলুম বরণ করেও মশিউর রহমান রনি আজ কোনঠাসা আর উড়ে এসে জুড়ে বসারাই আজ নেতৃত্ব দিতে চাইছে জেলা ছাত্রদলকে।
সূত্রে প্রকাশ, ২০১৮ সালের ৫ জুন মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও খাইরুল ইসলাম সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যের নারায়ণগঞ্জে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে আরও আছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ, সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান অনিক, যুগ্ম-সম্পাদক ইসমাঈল মামুন, মাইনুল ইসলাম রশিদ, নাজমুল হাসান বাবু, মশিউর রহমান শান্ত, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম রফিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে আহবায়ক ও আনোয়ার সাদাত সায়েমকে যুগ্ম আহবায়ক করে গঠন করা হয়েছিলো জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি। এ কমিটিতে আরো যুগ্ম আহবায়ক করা হয় মাহাবুব রহমান, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মশিউর রহমান রনি, মঞ্জুর হোসেন ও হারুন উর রশিদকে।
মাসুকুল ইসলাম রাজিবের নেতৃত্বাধীণ জেলা ছাত্রদলে থাকাকালীণ সময়ে মশিউর রহমান রনি রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, পুলিশের হামলা মামলাকে উপেক্ষা করে রাজপথে নিবেদিনপ্রাণ ছিলেন এই ছাত্রনেতা। এর ফলে একাধীক মামলার আসামী হয়ে কয়েকবারনও করতে হয়েছে তবুও পিছপা হননি তিনি। যখনই কোন কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে রনির উপস্থিতি সেখানে থাকতো সবার আগে। ফলে ২০১৮ সালের নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সবার অটোমেটিক চয়েজে পরিনত হন রনি।
অপরদিকে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে একেবারেই অপরিচিত মুখ খায়রুল ইসলাম সজিবের জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হওয়া ছিলো অনেকটাই অবাক করার মতো ঘটনা। তারচেয়েও অনেক পরীক্ষিত নেতাকে টপকে সজিবের জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারী হওয়ার পিছনে কাজ করেছে তার শিল্পপতি পিতা আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিশাল টাকার ভান্ডার। বাবার টাকার জোড়েই সজিব পেয়ে যান জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ।
জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি হওয়ার পরে সভাপতি রনি শুরু করেন সাংগঠনিকভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কাজ। এ লক্ষ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীর ঐক্যবদ্ধ করে থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঠিক এ সময়েই গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি। ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকা থেকে মশিউর রহমান রনিকে একটি বিদেশী পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতারের কথা জানায় ফতুল্লা থানা পুলিশ। দীর্ঘ ১৪১ দিন কারাভোগের পর ছাড়া চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রনি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। অথচ সেক্রেটারী সজিবসহ আজ যারা রনির বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদেরকে এই সরকারের আমলে নামে তেল দিয়ে আরামেই ঘুরতে দেখা গেছে, মামলা তাদের ছুঁতেও পারেনি।