নারায়ণগঞ্জ মেইল: “বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি” বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এধরনের ঘোষণা পাওয়ার পর সারাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া নেতারা আপাতত হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের জন্য মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের খুব একটা আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু এরই মধ্যে বিএনপি’র এক বিতর্কিত নেতা মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আর তার সেই ঘোষণায় উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে সেই বিএনপি নেতা নাকি জাতীয় পার্টির প্রয়াতঃ চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের পত্নী বিদিশা এরশাদ এর শরণাপন্ন হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সর্বকালীণ বিতর্কিত এক চরিত্র আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বিতর্ক যেনো তার সার্বক্ষণিক সঙ্গি। চরম বিতর্কিত এই নেতাকে ঘিরে নতুন এক গুঞ্জণ শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গণে আর তা হলো আবারো বিএনপি ছাড়ছেন টিপু। এর আগে একবার বিএনপি ছেড়ে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার “বিএনএফ” এ গিয়েছিলেন তিনি, তবে সেখানে বেশীদিন স্থায়ী হতে পারেননি, পুনরায় বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। এবারো টিপুর বিএনপি ছাড়ার গুঞ্জণ শোনা যাচ্ছে তবে এবার তিনি যাচ্ছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মো: এরশাদের স্ত্রী বিদিশার ছায়ায়, ইতিপূর্বে বিদিশা ঘোষনা দিয়েছিলেন বিএনপি ভেঙ্গে দুইভাগ করে ফেলবেন তিনি এবং গড়ে তুলবেন নতুন দল। বিদিশার সেই দলে যোগ দিতেই বিএনপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন টিপু এমনটাই জানা গেছে। আর টিপুর বিএনপি ছাড়া কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লোভ।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ পত্নী বিদিশার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর আন্তরিকতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অতি সম্প্রতি সেই সম্পর্ক আরো বেশী আন্তরিকতায় পরিনত হয়েছে বলে মনে করেন টিপু সংশ্লিষ্টরা। যার প্রমাণ গতবছর পাওয়া গিয়েছিল বিদিশার একটি ফেসবুক পোষ্টে টিপুর কমেন্ট করা দেখে। বিদিশার পোষ্টে টিপু লিখেছিল ‘আজও বিদিশা ফাউন্ডেশনের কর্নধার মানবতাবাদী নেত্রী বিদিশা সিদ্দিক অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে খাবার নিয়ে হাজির । ঢাকার রাজপথের অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে বিদিশা সিদ্দিক আপা এখন তাদের আপনজন । প্রতিদিন অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাদের জন্য বিদিশা সিদ্দিক খাবার নিয়ে যেতে যেতে তাদের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত পেয়ে গিয়েছেন । আসলেই বিদিশা সিদ্দিক একজন মানবতাবাদী নেত্রী, তার মানবতা ও বিবেক আছে বলেই প্রতিদিন ঝড় ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের আরাম ও ঘুমকে হারাম করে অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাদের কাছে কখনো রাতের খাবার, কখনো সেহেরি, কখনো ইফতারী নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন । একজন নারী হয়েও কখনো ক্লান্তি তাকে অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা থেকে পিছিয়ে রাখতে পারে নাই। সাবাস বিদিশা ফাউন্ডেশন ও সাবাস মানবতাবাদী নেত্রী বিদিশা সিদ্দিক আপা। সৃষ্টিকর্তা আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল করুক’।
এ ছাড়াও চলতি বছর বিদিশার বাড়িতে ঘনঘন যাচ্ছেন বিএনপি নেতা টিপু। দীর্ঘক্ষন রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার পরে একসাথে খাওয়া-দাওয়াও করছেন বলে জানা গেছে। এরকম কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। আর এসব দেখে টিপুর পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে আঁচ করছেন অনেকেই। কারন বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, টিপু হচ্ছেন লোভী এবং স্বার্থপর টাইপের মানুষ। যেদিকে সুবিধা পায় টিপু সেদিকেই ভীড়ে যান। এক সময় বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকারের আশ্রয়ে ছিলেন টিপু। কিন্তু স্বার্থের কারনে তৈমূরকে ছেড়ে গিয়াসউদ্দিন, কাজী মনির, সাখাওয়াত হয়ে এখন মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালামের ছত্রছায়ায় টিপুর অবস্থান। তবে এড. আবুল কালামের সাথেও টিপুর বনিবনা হচ্ছে না কিছুদিন যাবত। তাই কালামের ডেরা ছেড়ে নতুন কোন আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছেন সুচতুর টিপু আর সেক্ষেত্রে তার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারেন এরশাদ পত্নী বিদশা।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র বিতর্কিত নেতা আবু আল ইফসুফ খান টিপু তার ব্যবহার আর আচার আচরণের কারণে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও একাধীকবার লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। অনেকটা পরজীবী উদ্ভিদের মতো কোন না কোন নেতার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় থাকেন টিপু যার কারনে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ‘পাকনা টিপু’ নামেই বেশী পরিচিত তিনি। নানা ঘাটের জল খেয়ে গত কয়েকবছর যাবত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালামের ছায়াতলে আশ্রিত আছেন এই বিতর্কিত নেতা।
গত কয়েক বছরে এই টিপু এড. আবুল কালামের পক্ষ হয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র অনেক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের শায়েস্তা করতে এড. আবুল কালাম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন এই পাকনা টিপুকে। গত সিটি নির্বাচনের পর থেকেই এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। আর এর ফলে এড. সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে টিপুকে দিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছেন এড. আবুল কালাম। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক বিতর্কিত পোষ্ট দিয়ে এড. সাখাওয়াতের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছেন টিপু। এমনকি মহানগর যুবদলের তৎকালীণ আহবায়ক সিটি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এ আসনে নির্বাচনের ঘোষনা দেওয়ার পরে খোরশেদের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের বাজে প্রচারনা চালিয়েছিলেন এই টিপু।