নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ দুটি আসন চলে যেতে পারে গডফাদার শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের পকেটে। বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়ে ওসমান পরিবারকে দুটি আসন উপহার দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
নারায়ণগঞ্জের এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংসদীয় আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এবং নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দর থানা নিয়ে গঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এই দুটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। ধারণা করা হচ্ছে জোটের জন্য এই আসনটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে যাকে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার সাথে তৃণমূলের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি ভোটারদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি মুখ তাই ভোটের মাঠে চরম ভরাডুবির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওসমান পরিবারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের কিং মেকার হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ওসমান পরিবারের আরেক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন।
স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে গডফাদার ওসমান পরিবারের সাথে আঁতাত করে চলা এসকল বহুরূপী লোকদের নির্বাচনী মাঠে মেনে নিতে পারছেন না সাধারণ ভোটাররা। কারণ নারায়ণগঞ্জের মানুষ ওসমান পরিবারের বীভৎস রূপ দেখেছে। তারা দেখেছে খুন-গুম আর নির্যাতন। তাই ওসমান পরিবারের সাথে সম্পর্কযুক্ত কাউকে নারায়ণগঞ্জের মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না।
নারায়ণগঞ্জের সচেতন ভোটাররা মনে করেন বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে হবে। সন্ত্রাসের জন্মদাতা ওসমান পরিবারকে মুছে ফেলতে হবে। তা না হলে নারায়ণগঞ্জ আবারো সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হবে। ৫ আগস্টের পর দুর্ধর্ষ ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও বিদেশে বসে বিভিন্ন নাশকতার চক্রান্ত করছে। আর এসব চক্রান্তে তাদেরকে সহায়তা করছে বাংলাদেশে থাকা ওসমান পরিবারের দোসররা। তাই এদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। বিশেষ করে নির্বাচনী মাঠে স্বৈরাচারের কোনো দোসরকে রাখা যাবে না। কারণ এরা নির্বাচিত হয়ে এলে নারায়ণগঞ্জ আবার ওসমান পরিবারের নিয়ন্ত্রনে চলে যাবে। যা কোনদিনও হতে দেয়া যাবে না।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির কথিত কিং মেকার ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ছিলেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে অন্যতম। প্রয়াত নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সেলিম ওসমান নির্বাচনে অংশ নিলে প্রথমে সেলিম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে ওসমানীয় সম্রাজ্যে যোগ দেন। এরপর থেকে ওসমান পরিবারের সাথে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেন।
মোহাম্মদ আলী নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও ওসমান পরিবার উভয়ের সাথেই সুসম্পর্ক রাখতেন। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও তাদের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালিয়ে যান মোহাম্মদ আলী। তার ভাতিজা ও ভাগ্নেরা দখলবাজী শুরু করেন ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায়। তবে ২৪ মার্চ দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তোপের মুখে পড়েন মোহাম্মদ আলী। দীর্ঘদিনে অভ্যাসের কারণে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তিনি। এই ব্যক্তব্যকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ আলীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা। পরবর্তিতে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চান মোহাম্মদ আলী।
ওসমান পরিবারের আরেক ঘনিষ্ট ব্যক্তি বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি মাকসুদ দীর্ঘদিন সেলিম ওসমানের রাজনীতি করেছেন। ওসমান পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে বন্দর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তিনি। মাকসুদের রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এদেরকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ভূমিদস্যুতা- এমন কোনো অপরাধ নেই যা এই মাকসুদ চেয়ারম্যান করেননি। সেই মাকসুদ এবার এমপি নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছেন।
