নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একজন লড়াকু যোদ্ধা হলেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে প্রবল পরাক্রমশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলে দোর্দান্ত গতিতে লক্ষ্যের পানে ছুটে চলেছেন সদা হাস্যোজ্জল এই রাজনীতিবীদ। নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার বাদি পক্ষের এই কৌশলী ক্ষমতাশীণদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যেভাবে খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এবং নিম্ন আদালত থেকে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে চিরদিন। তাছাড়া রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় নিজের দলের মধ্যে থেকেও নানা চক্রান্ত আর বাঁধা বিঘ্ন সৃষ্টি করা হলেও আপন ছন্দে তা ঠিকই পেরিয়ে গেছেন এডভোকেট সাখাওয়াত। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদেও রাজনৈতিক মামলায় বিনা খরচে আইনী সহায়তা দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অসামান্য উচ্চতায়। যার ফলস্বরূপ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজনদের একজনে পরিনত হয়েছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আলোচিত একটি নাম এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ২০১৪ সালে সারা বাংলাদেশে আলোড়ন তুলে চাঞ্চল্যকর সাত খুন হত্যাকান্ড। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরনের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা নুর হোসেন ও র্যাবের উর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তদন্তে উঠে আসে র্যাবের সার্বিক তত্ত্বাবধানেই এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিলো। তখন অদম্য সাহস আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের জোড়ালো প্রতিবাদ জানান তৎকালীন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সকল রক্তচক্ষু আর ভয় ডরকে পিছনে ফেলে বাদি পক্ষে মামলা পরিচালনা করে দোষীদেও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে লড়াই করে যান।
এরপর ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে মেয়র নির্বাচন করেন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং নিজ দলের সুবিধাবাদী নেতাদের বিরোধীতার পরেও প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে পরাজিত হন। এভাবে দিনে দিনে বিএনপির নেতাকর্মীদের আস্থা আর ভরসার জায়গা তৈরি করেন এডভোকেট সাখাওয়াত। সে সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল দলীয় কর্মকান্ড চারদেয়ালে বন্দি কওে ফেলেন। এডভোকেট সাখাওয়াত সেই ঘরবন্দি আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেই নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপওথে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন। এই আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের হামলা মামলার শিকার হয়েছেন বহুবার, জেলও খেটেছেন দীর্ঘদিন। সাখাওয়াতের এই এগিয়ে চলা পছন্দ হয়নি যাদের, সেই গৃহবন্দি নেতারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং তাকে বহিস্কারের জন্যে কেন্দ্র বরাবর লিখিত আবেদনও জানান। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই অদম্য সাখাওয়াতকে আটকে রাখতে পারেনি। যাকে বহিস্কারের জন্যে আবেদন করা হয়েছিলো জিয়া পরিবারের আস্থা আর ভালোবাসা থাকায় তাকেই বানানো হয় মহানগর বিএনপির আহবায়ক।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ঘোষনা করা হয় ৪১ সদস্যের নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি। এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহবায়ক এবং এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষনার পর থেকেই কমিটির বিরোধীতা করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সবচেয়ে বিতর্কিত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। কমিটি ঘোষনার কয়েকদিনের মধ্যেই বহিস্কৃত বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসভবনে গিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন মুকুলের নেতৃত্বে ১৪ জন বিএনপি নেতা। এরপর থেকে মুকুলের নেতৃত্বে কিছু বিশৃঙ্খল নেতাকর্মী আলাদা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দলের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করতে থাকে। দলের এই চরম ক্রান্তিকালে যখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন তখন সরকারী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দলের মাঝে বিভেদ বিভক্তি সৃষ্টির পায়তারা করেন মুকুল। কিন্তু মুকুল-সেন্টুদের প্রবল বিরোধীতা উপেক্ষা করে আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি মহানগর বিএনপির আওতাধীন ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের লক্ষ্যে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এডভোকেট সাখাওয়াত এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন সদর থান, বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলা এবং সদর থানার অন্তর্গত ৮টি ওয়ার্ড ও বন্দর থানার অন্তর্গত ৯টি ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনের মাধমে গঠন করেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করে এখন নারায়ণগঞ্জ শহরের রাজপথ দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। যে কোনো কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করছেন তারা। আর এসব কিছুর পেছনে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বিচক্ষনতা আর দুরদর্শিতার প্রশংসা করছেন সবাই।