নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বলেছেন, আপনারা অনেকেই জানেন না ১৯৭৭ সালে খন্দকার মোস্তাক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে একটি পার্টি করেছিলেন। সেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রথম সভা হচ্ছিলো বাইতুল মোকাররমে। ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি নিয়াজুলের বড় ভাই সুইট সেই সভা বানচাল করতে সাপ ছেড়ে দিয়েছিল। ইতিহাস যেমন সত্য এটাও তেমন সত্য। আর এ কারণে নিয়াজুলকে হত্যা করতে ডেবিট সাইদরা গুলি করে ফেলে রেখেছিল, নিয়াজুলের বড় ভাই সুইটকে হত্যা করা হয়েছিলো।
শনিবার ( ৮ এপ্রিল ) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগ আয়োজিত বিএনপি- জামাত শিবিরের রাজনীতির নামে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা গুলো বলেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীকে উদ্দেশ্য করে খোকন সাহা বলেন, এই শহরের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী ২০০৬ সালে যুবলীগের সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ইয়েস এদেশে গোলাম সারোয়ারের মতো ছেলেদের দরকার। যদি ভুল হয়ে থাকে তবে সেই সময়ের পত্র পত্রিকা আপনাদের দেখাবো। আপনাদের পক্ষে থাকলে সন্ত্রাসীরা ফেরেশতা হয়ে যায় আর শামীম ওসমানের পক্ষে থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলে তারা সন্ত্রাসী হয়ে যায়। এসব বাদ দেন, আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে দলটা গুছাই নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন দলটাকে গোছানোর জন্য।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশ্যে খোকন সাহা বলেন, অনেকে মাঠে নেমেছেন শহরে পোস্টার লাগাচ্ছেন। এমপি নমিনেশন পাওয়ার জন্য দলটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলছেন। আমি বলতে চাই আপনি তো অনেক পেয়েছেন, অন্যদেরকে পাওয়ার সুযোগ করে দেন। বলেন, দল আমাকে অনেক দিয়েছে এবার অন্যরাও কিছু পাওয়ার দাবি রাখে। সেটা না করে দলকে আপনারা বিভক্ত করছেন। আমি কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছি, ইতিমধ্যে তা নেত্রীর কাছে পৌঁছেও গেছে। এখনতো দুইজন প্রার্থী দেখা যাচ্ছে আগামী ঈদের পরে অন্তত ২০ জন নৌকা নমিনেশন চাইবে আর ২০টা গ্রুপে বিভক্ত করে ফেলার চেষ্টা করা হবে। আরে দলাদলি বাদ দিয়ে আসুন না একজন নৌকার নমিনেশন চাই। সবাই মিলে একজনের জন্য নৌকার জন্য ফাইট করি।
তিনি আরো বলেন, নমিনেশন দেওয়ার মালিক একমাত্র নেত্রী। দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে তিনি নমিনেশন দেবেন। আমি পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই আমি এই শহরে আওয়ামী লীগের ২৭ বছরের সাধারণ সম্পাদক। আপনারা কোন ভাইকে কথা দিবেন না। নেত্রী যাকে নমিনেশন দেবে আমরা তার পক্ষে কাজ করব। নেত্রী যদি জোটের পক্ষে ন্যাপের এবি সিদ্দিককে নৌকা প্রতীক দেন, আমরা এবি সিদ্দিকের পক্ষেই কাজ করব।
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করছি সকালে আর বিএনপি অশান্তি সমাবেশ করবে বিকেলে ঠিক ইফতারের আগ মুহূর্তে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যাবে। পবিত্র রমজান মাসে মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। আমি বিএনপি’র ভাইদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা নির্বাচনে আসেন। বিদেশীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করে কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের একটাই রাস্তা আর সেটা হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনে জয়লাভ করলে আপনারা ক্ষমতায় আসবেন। আপনাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেবো। আরেকটা কথা বলতে চাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে, তা আর এদেশে ফিরে আসবে না।
মীর্জা ফখরুল সাহেব বললেন তারেক জিয়া নাকি শিশু মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আরে তারেক জিয়া তো ছিলো তার মায়ের সাথে ক্যান্টনমেন্টে। তারেক জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা করবেন না। আরে মীর্জা ফখরুল আপনি তো বলেছিলেন পাকিস্তান ভালো ছিলো, তাহলে চলে যান পাকিস্তানে। এই দেশে থাকবে না এই দেশে খাবেন আর পাকিস্তানের গুনগান গাইবেন তা হবে না। আপনার বাবা তো ছিল ঠাকুরগাঁওয়ের প্রখ্যাত রাজাকার। আর আপনি করতেন এনএসএফ। এনএসএফ হচ্ছে তৎকালীন সরকারী দলের গুন্ডা বাহিনী। আপনি সেই গুন্ডাবাহিনী সদস্য ছিলেন। বিএনপির আমলে আপনাদের সেই দুঃশাসন এবং আগুন সন্ত্রাসের কথা এখনো দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিলেন ৫১১ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস রয়েছে সাড়ে তিন হাজার, ওদের আগুন সন্ত্রাস থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট সব ধ্বংস করে দিয়েছিলো যা করেছিলো সেই একাত্তর সালে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উঠিয়েছিল।
বিএনপির ভাইদের উদ্দেশ্যে বলবো আসুন অশান্তি সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটাকে গড়ে তুলি। খালেদা জিয়ার মত নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে ফেল করবেন না। নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে ফেল করলে জনগনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন।
শান্তি সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল বলেন, আমাদের উপরে নির্দেশ যারা যেখানে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা করবে আমরা সেখানে শান্তির পতাকা নিয়ে যাব। এবং জনগণকে নিয়ে আমরা পটাক দিব কোন আপোষ হবে না, লড়াই হবে। এ লড়াই মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলা লড়াই। এ লড়াই শান্তির লড়াই, শান্তির পতাকা উড়ানোর লড়াই।
তিনি বলেন, ঢাকা বঙ্গবন্ধু বাজার আগুন লাগানোর ঘটনা আমি তো শুনলাম কেউ আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। ফিসফিস করে মানুষ বলে ওই তো অগ্নি সন্ত্রাস গিরিধারীদেরই কাজ ধরে নিয়ে রিমান্ড দেন সব কথা বের হয়ে যাবে। বাংলাদেশের জায়গায় জায়গায় খালি আগুন লাগে অগ্নি সংযোগ ঘটে কারা এগুলো লাগায়। কেন এই আগুন লাগে কিভাবে লাগে। আগুন লাগিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না। ক্ষমতাচ্যুত জন্য করতে হলে ধ্বংসত্ব বন্ধ করতে হবে, ভোটের লড়াইয়ে আসতে হবে। ভোটের মাধ্যমে যদি ক্ষমতা আসতে পারেন আওয়ামী লীগ আপনাদেরকে স্যালুট জানাবে। ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে রাজনীতি করে। মানুষের শান্তির জন্য মঙ্গলের জন্য নেত্রী ডাক দিবেন আমাদের খোকন ভাই ঘরে বসে থাকার সময় নাই। ডাক দিয়েছেন শামীম ভাই ঘরে থাকার সময় নাই।
তিনি আরও বলেন, আসলে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সময় তো আর বেশিদিন নাই । কয়েকদিন পরে নির্বাচন চল আসছে আর বিএনপি আগুন সন্ত্রাস নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকেন আগামী দিনে গণতন্ত্র লড়াইয়ের জন্য। আগামী নির্বাচনে আপনাদের মূল্যবান ভোটটি দিয়ে নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করবেন। জনগণের সেবা করার সুযোগ দিবেন।
এদিকে শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকে। মিছিলে মিছিলে আর নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে উঠে আসে বিএনপি জামাতের আগুণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. হান্নান আহমেদ দুলাল’র সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল,মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা, দপ্তর সম্পাদক এড. বিদ্যুৎ কুমার সাহা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আতিকুর রহমান সোহেল, সদস্য শিখণ সরকার শিপন,১২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নিয়াজুল ইসলাম, ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি, মহানগর তাঁতীলীগের আহবায়ক চৌধুরী এইচএম শাহেদসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।