নারায়ণগঞ্জ মেইল: ২০০১ সালের ১৬ জুন নারায়নগঞ্জের চাষাড়ায় আওয়ামীলীগ অফিসে আলোচিত বোমা হামলার মামলায় সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।
সাক্ষ্য দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এ মামলায় অনেকের নাম আছে যারা অপরাধী না।
যারা প্রকৃত অপরাধী তারা এ মামলা থেকে সেভ হয়ে গেছে। আমরা ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছি, পার্টির সেক্রেটারিকে জানিয়েছি এই চার্জশীট ও এই এজাহার আমি মানিনা।
যারা নির্দোষ, সে বিএনপি করুক কোন পার্টি করুক তাতে আমার কিছু আসে যায়না। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকরের কারনে কোনো নিরপরাধ লোক সে যদি আমার দুশমন, আমার দলের বিরোধী লোকও হয় যেন সাজা না পায়।
এ মামলার এজাহারভূক্ত সাত আসামীর মধ্যে একমাত্র শওকত হাশেম শকু বিএনপি নেতা। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
সোমবার দুপুরে ঘটনার নারায়নগঞ্জ জেলা জজ আদালতে অতিরিক্ত জেলা জজ রাজিয়া আকতারের আদালতে এ মামলার স্বাক্ষ্য প্রদানের সময় এ কথা বলেন। দীর্ঘ ১৯ বছরে মোট ৩১ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন কর্ া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট আবদুর রহিম, পিপি এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন সহ অনেক আইনজীবি।
এমপি শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি খুব অবাক, বিস্মিত এবং দুঃখিত। আমি যেহেতু প্রধান ভিকটিম, মামলার সাক্ষি হিসেবে আমি দেখলাম আমি যা বলেছিলাম তার সাথে চার্জশীট এজাহারের মিল নেই। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ করেছি যিনি মামলা তদন্ত করেছেন তাকে আদালতে তলব করা হোক। আমরা এ মামলার অধিকতর তদন্ত চেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, এ মামলায় অনেকের নাম আছে যারা অপরাধী না। যারা প্রকৃত অপরাধী তারা এ মামলা থেকে সেভ হয়ে গেছে। আমরা ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছি, পার্টির সেক্রেটারিকে জানিয়েছি এই চার্জশীট ও এই এজাহার আমি মানিনা। কারন আমি এখানে কোনো নেগোসিয়েশন করবো না। ওরা আমাকে মারতে যেয়ে বিশজন মানুষকে কাপুরুষের মতো মেরেছে। আমি এখনো জানি আমার জীবন আগামীকালও নিরাপদ না।
আমাদের উপরে শত শত বার হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। ’৮১ তে তোলারাম কলেজে হামলা হয়েছে। নয়শ রাউন্ড গুলি করা হয়েছিলো। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে বেঁচে আছি। এই মামলাটা যাতে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা হয়। যারা সত্যিকারের দোষি লোক তাদের যাতে বিচার হয়, আর যারা নির্দোষ, সে বিএনপি করুক কোন পার্টি করুক তাতে আমার কিছু আসে যায়না। আমি আপনাদের সামনে যা বলেছি আদালতেও তা-ই বলেছি, আরেকটি বাড়িয়ে বলেছি, আদালত আমার এই কথায় কনভিন্সড হয়েছেন, কনভিন্সড হয়ে ঐ কোর্টের যে এডিশনাল পিপি সাহেব আছেন তাকে পিটিশন দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতকে আমি বলেছি আইনের ফাঁক ফোকরে হয়তো একটা অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে, তাতে আমাদের কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই। কারন আদালত দেখবে সাক্ষ প্রমান। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকরের কারনে কোনো নিরপরাধ লোক, সে যদি আমার দুশমন, আমার দলের বিরোধী লোকও হয় যেন সাজা না পায়। কারন তাহলে আলটিমেটলি সাজাপ্রাপ্ত হবে সংবিধান, সাজাপ্রাপ্ত হবে আইন, সাজাপ্রাপ্ত হবে আমাদের বিবেক, আমাদের ঈমান। আমি যা বলি নাই তাই সে (তদন্ত কর্মকর্তা) লিখ্খা রাখছে। শুধু আমার ক্ষেত্রে না সবার ক্ষেত্রেই সে একই কাজ করছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, এমপি সাহেবের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত একটি লিখিত আবেদন দিতে বলেছেন। পরে এ আবেদনের উপর শুনানি হবে। আমরা শুনানির জন্য কাছাকাছি সময়ের একটি তারিখ দেয়ার আবেদন জানিয়েছি আদালতে। আর এ লিখিত আবেদন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। পিপি আরো জানান, এ মামলার চার্জশীটে সাতজনকে আসামী করা হয়েছে। এরা হচ্ছে মুফতি হান্নান, মুরসালিন, মুত্তাকিন, জুয়েল, শওকত হাশেম শকু ও ওবায়দুল। জুয়েল ২১ আগষ্ট গ্রেনেড মামলারও আসামী। তাকে আদালতে হাজির করা হয়। শওকত হাশেম শকু জামিনে আছেন। তিনি আদালতে হাজিরা দেন। ওবায়দুল পলাতক রয়েছেন।