নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে দীর্ঘ বছর একক রাজত্ব ছিল ওসমান পরিবারের। রাজনীতির পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের অপরাধ জগত, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল তাদের। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীকে বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দেয়। একতরফা এই নির্বাচনে এমপি হয়ে নারায়ণগঞ্জে নিজের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করেন শামীম ওসমান। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন নাসিম ওসমান। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হত সেলিম ওসমান। ২০২৪ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের একক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর পালিয়ে যায় ওসমান পরিবার। কর্মীদের বিপদে রেখে হাজার কোটি টাকা পাচার করে বেশ আরামে আছেন তারা।
জানাগেছে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলেই দেশ থেকে পালিয়ে যান শামীম ওসমান তথা ওসমান পরিবার। এরআগে তিনবার দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও বার বার বিশ্বাস করেছিল তাদের কর্মীরা। আর কর্মী বাহিনীর কারণেই দাপুটে হয়ে উঠেছিল শামীম ওসমান। তবে বারবার ওসমান পরিবারকে বিশ্বাস করলেও এবার ব্যতিক্রম চিত্র দেখাগেছে শামীম ওসমানের অনুসারিদের মধ্যে। ওসমানরা পালিয়ে গেলেও হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একেবারে ধ্বংস ওসমান পরিবার।
ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ট একজন জানান, তারা পালিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের একটুও অবগত করেনি। আগস্টের ৫ তারিখ আমরা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে মোবাইল ফোনও চালাচ্ছি না। অথচ তাদের নির্দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে আমরা মাঠে ছিলাম। এই বিপদের দিন আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না।
ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, উনষত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ সব প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে যে পরিবারটির উত্থান দুই পুরুষ বাদে নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণেই তাদের সম্মান আজ ভূলুন্ঠিত। শামীম ওসমান নিজেকে সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার পুত্র অয়ন ওসমানও সন্ত্রাসীদের হিসেবে গড়ে উঠেছে। গত ১৯ জুলাই ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষন করেছিল। বলা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিজের ক্ষতি নিজেই না করে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার উত্থান ও পতন তারই দৃষ্টান্ত।