নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সন্ত্রাসীদের গডফাদার শামীম ওসমান। যিনি আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় না থাকলেই দেশ থেকে পালিয়ে যান। বোরকা পড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকের কাছে তিনি ‘বোরকা শামীম’ হিসেবেই পরিচিত। ক্ষমতায় থাকতে তাকে অনেকেই ‘সিংহ পুরুষ’ হিসেবে অবহিত করতেন। দুর্দান্ত প্রভাবশালী এ ব্যক্তি গত ১৬ বছর কোনো না কোনোভাবে ছিলেন আলোচনায়। ছিলেন সমালোচনায়ও। কখনও কথায়, কখনও কোনো ঘটনা ঘটিয়ে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম শামীম ওসমান মঞ্চে যেমন ছিলেন বাকপটু, তেমনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। রাজনৈতিকজীবনে যেমন কাঁপিয়েছিলেন রাজপথ, তেমনি সংসদেও তার বক্তব্য অনেক সময় ঝড় তুলেছিল। সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার উপর গুলি বর্ষন করে অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। নিজের সন্ত্রাসী পুত্র অয়ন ওসমানকে সাথে নিয়ে ফিল্মি স্ট্যাইলে হত্যা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ফের পালিয়ে যায় শামীম ওসমান ও তার পারিবার। এরআগে বিভিন্ন সময়ে তিনবার দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন শামীম ওসমান। নিজের কর্মীদের বিপদের মুখে রেখেই দেশ ত্যাগ করেন তিনি। তবে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর এবার শামীম ওসমানের মত সারা দেশের অসংখ্য আওয়ামীলীগ নেতা পালিয়ে গেলেও ব্যতিক্রম ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াত আইভী। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর গত ৮ মে পর্যন্ত নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। এমনকি গত ১৫ আগস্ট ২নং রেল গেইটে আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে শেখ মজিবুরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেও নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
পরবর্তিতে ৯ মে ভোর পৌনে ৬টায় সেলিনা হায়াত আইভীকে গ্রেফতার করে করে পুলিশ। এর আগে দিবাগত রাত ১১ টায় সাবেক মেয়রকে আটক করতে দেওভোগে অবস্থিত চুনকা কুটিরে অভিযান চালায় তারা। রাতভর এলাকাবাসী ও সমর্থকদের বাধায় বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। শেখ হাসিনার পতনের ৯ মাস আইভীকে আটক করতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এদিকে মসজিদের মাইকে পুলিশ আসার খবর পেয়ে আইভীর বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিয়েছিল এলাকাবাসী। মূল সড়ক থেকে বাড়িতে আসার পথে বাঁশ, ইট, পাথর ও বালু দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল তারা।
২০০৩ সালে বিএনপি সরকার আসলে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন আইভী। সেই সময় বোরকা শামীম বিদেশ পালিয়ে থাকায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের হাল ধরেছিলেন আইভী। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও পরবর্তিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন তিনি। বিগত সময়ে শামীম ওসমানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব থাকা আইভী বরাবরই বলতেন আমরা দেশ ছেড়ে পালাবো না। তারই বাস্তবতা দেখা গিয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর। আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতারাও যখন আত্মগোপন ছিলেন তখন নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলন সেলিনা হায়াত আইভী।