নারায়ণগঞ্জ মেইল: দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এ অপরাধে ইতিমধ্যেই তার জেলা বিএনপি’র আহবায়ক পদ কেড়ে নেয়া হয়েছে। যেকোনো সময় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এমন অবস্থায়ও একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন তৈমুর। নিজেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন তিনি প্রতিনিয়ত। এমনকি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে ফোন করে সমর্থন জানিয়েছেন বলে প্রচারও করছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি বরং দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে না। তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপি’র প্রার্থী না। তিনি কেনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সেটা তাকে জিজ্ঞেস করুন”। বৃহস্পতিবার ৩০ ডিসেম্বর রিজভীর বক্তব্যসহ এই নিউজ নারায়ণগঞ্জের একটি স্থানীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। তাই নেতাকর্মীরা মনে করছেন মেয়র হওয়ার লোভে বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তৈমুর।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়া। সারাদেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা নিতে পারবে না বলেও প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো দলটি। এমতাবস্থায় দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছেন। এদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না থাকায় নেতাকর্মীরা তৈমুরের আহবানে সাড়া দিতে পারছেন না। তৈমুর নাকি কেন্দ্র- কার ডাকে সাড়া দেবেন তারা, এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে নেতাকর্মীদের মনে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয় প্রতীকে অংশ নেবে না দলটি। সেই হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তকে উপক্ষো করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকার। এতে করে তার উপর প্রতি ক্ষুদ্ধ দলীয় হাই কমান্ড ইতিমধ্যেই তাকে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক পদ থেকে অপসারণ করে দিয়েছে। কারন তৈমূর আলম বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে বিএনপির হাই কমান্ড অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু তৈমূর আলম দলীয় প্রধানের কথা চিন্তা না করে নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার কাছে দল নয় বরং নিজের স্বার্থটাই বড় মনে করেছেন। যেখানে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ন পদে থেকেও তিনি নির্বাচন করছে। এতে করে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বিএনপির হাই কমান্ড। হতে পারে দল ও দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করার করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত।
এক বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এখানে তো কোনো নির্বাচন নেই। তিনি আরও বলেছিলেন, দলীয়ভাবে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের এখনও আছে। এ নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার যোগ্যতা নেই। তারা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কথা বলে জানা গেছে, একদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থার সংকট, অন্যদিকে দলীয় প্রতীক নেই, দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ সমর্থনও নেই। শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে বিতর্কিত নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার কোনো মানে নেই। এতে একদিকে যেমন তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা, হয়রানি, জেল-জুলুম, সময়, শ্রম ব্যয় হয়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় নেতাকর্মীদের। আবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় সারাদেশে হাসির খোরাক হতে হবে, যা রাজনৈতিক ইমেজকে নষ্ট করবে। তাই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনসহ সব নির্বাচনেই না যাওয়ার সিদ্ধান্তই বিএনপির জন্য সঠিক।
আরও জানা যায়, তৈমূর আলম নিজের স্বার্থের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই নির্বাচন বিএনপির নেতাকর্মীরা কেনো তার পক্ষে থাকবে। যে সরকারের বিএনপির চেয়ারপারস তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালোদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা করাতে দিচ্ছে না। আমরা তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছি আর সেই মুহূর্তে তিনি নির্বাচন করছে। তাও আবার দলীয় সিদ্ধান্তে না তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে। বিএনপির মত এতো বড় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দলের সাথে বেইমানী ছাড়া আর কিছু না। তার মতো নিজ স্বার্থবাদী নেতাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করারের দাবি জানাচ্ছি তারা।