মামার পাপে কপাল পুড়লো ভাগিনার!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন রশিদুর রহমান বশু। এর আগে ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। গত ১৫ বছরে বিরোধী দলের রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে যে কয়েকটা নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছে তার মধ্যে রশু একটি। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন বহুবার। বারবার হয়েছেন কারানির্যাতিত। আর তাই মহানগর যুবদলের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য প্রথম সারিতেই থাকার কথা ছিল তার নাম।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রাজপথে এত ত্যাগ তিতিক্ষার পরেও মহানগর যুবদলের কমিটিতে ঠাঁই মিলেনি এই পরীক্ষিত জিয়ার সৈনিকের। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, রশুর দুই মামা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের অপকর্মের খেসারত দিতে হচ্ছে রশুকে। সম্পর্কে মামা হওয়ায় তাদের বলয়েই রাজনীতি করতে হয়েছে রশুকে। আরে এটাই কাল হয়েছে রশুর জন্য। কেন্দ্রীয় যুবদল থেকে খোরশেদ অনুসারী পুরো টিমকেই মাইনাস করে দেয়া হয়েছে। কারণ গত দুই বছর খোরশেদ যুবদলের ব্যানার কোথাও কোনো প্রোগ্রাম করেননি। অথচ নিজেকে প্রচার করেছেন প্রতিটি মুহূর্তে। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খুরশেদের উপর ক্ষিপ্ত, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নবগঠিত মহানগর যুবদলের কমিটিতে। সেখানে স্থান পাননি খোরশেদ শিবিরের কোনো নেতাকর্মী।

কেন্দ্রীয় যুবদল সূত্রে জানা গেছে, রশুর বড় মামা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার কেন্দ্রে রশুর জন্য কোন তদবির করেননি বরং তিনি চেষ্টা করেছেন মাজহারুল ইসলাম জোসেফের জন্য। কিন্তু বিগত ১৫ বছর রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে জোসেফের কোনো অবদান না থাকায় তৈমুরের সে তদবির প্রত্যাখ্যান হয়। আর এভাবেই রশিদুর রহমান রশুর মতো রাজপথের ত্যাগী নেতা শুধুমাত্র দুই মামার গ্যারাকলে পড়ে আজ পদবঞ্চিত।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটিতে একাধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। নিজের অনুগত লোকদের দিয়ে কমিটি করতেন এবং ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিতেন খোরশেদ। গুঞ্জন আছে নিজের কর্মচারী দারোয়ান মালি ড্রাইভার আর চাকর বাকরদের কমিটিতে পদ দিয়েছেন তিনি অথচ রাজপথের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে করেছেন অবহেলা।

তাছাড়া মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিশাল বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে খোরশেদের বিরুদ্ধে। সিদ্ধিরগঞ্জের কমিটির জন্য মমতাজউদ্দীন মন্তুর কাছ থেকে ৫ লাখ এবং বন্দরের আহমদ আলীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয়ায় ঘটনতো পুরোপুরি ওপেন সিক্রেট। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় দশ হাজার বিশ হাজার করে যার কাছ থেকে যেমন পেরেছেন তেমনটাই নিয়েছেন খোরশেদ।

মহামারী করোনা কালীন সময়ে খোরশেদ নানা জনহিতকর কাজ করেছেন কিন্তু কোথাও যুবদলের ব্যানার ব্যবহার করেননি। তিনি টিম খোরশেদ নাম দিয়ে নিজেকে প্রচার করেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করেননি অথচ দিনের পর দিন নিজের প্রচার চালানোর জন্য যুব দলের নেতাকর্মীদেরকে ব্যবহার করেছেন।

সর্বশেষ খোরশেদ যুবদলে নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য এমন একজনকে আহ্বায়ক হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন যাকে গত ১৫ বছরে একদিনও রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি। একসময় ছাত্রদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে ১৫ বছর পর রাজপথে নামিয়ে নিজ বলয়ে যুবদলের কমিটি রাখতে চেয়েছিলেন খোরশেদ। কিন্তু নিষ্ক্রিয় জোসেফকে কোনভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে এত সব অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছিল কেন্দ্রীয় যুবদলের টেবিলে। তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছিল কেন তিনি বিএনপি কিংবা যুবদলকে কোথাও হাইলাইট না করে নিজের প্রচার চালিয়েছেন। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি খোরশেদ। তাছাড়া দিনের-পর-দিন মহানগর যুবদলে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার খেসারত হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবদলের গুড লিস্ট থেকে নাম কাটা যায় খোরশেদের। যার ফলাফল নতুন ঘোষিত কমিটিতে খোরশেদ অনুসারী কাউকেইই রাখা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ