এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল হাই স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেছেন, জাকির হোসেন তো কোনোদিন আওয়ামীলীগ করেনি। কিন্তু সে কিভাবে নৌকা প্রতীক পায়? আমি তার সুপারিশে স্বাক্ষর করিনি। তার সঙ্গে শুরুতেই হেফাজত ইসলাম ছিল।
এদিকে গত ২৯ অক্টোবর শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও মাওলানা হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে হেফাজতের শত শত নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন।
হেফাজতে ইসলাম ও জামায়েত ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলার শীর্ষ নেতারা সহ ফতুল্লার কাশিপুর মাদ্রাসা, মুক্তারকান্দী মাদ্রাসা, ডিক্রিরচর মাদ্রাসা ও আলীরটেক ইউনিয়নের আশপাশের ব্রিকফিল্টের (ইটখোলা) শ্রমিকদের নিয়ে এই শোডাউন করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। যেখানে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ছাড়াও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা হারুন অর রশীদ, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সায়েম, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সহ শীর্ষ নেতারা নৌকা প্রতীকের পক্ষে এই শোডাউন করেছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, ২৯ অক্টোবর শুক্রবার বাদ জুমা আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে আলীরটেক ডিক্রিরচর বাজার সংলগ্ন মাঠে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেনের পক্ষে কয়েক হাজার মানুষের ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয়।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ নির্বাচনের দায়ত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করা হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তিনি। উল্টো শুক্রবার বাদ জুমা জাকির হোসেনের এই ভুড়িভোজের অনুষ্ঠানের চারপাশে পুলিশি প্রহরা দেখা গেছে। ফলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উল্টো ভুমিকায় স্থানীয়রা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা দেখছেন না।
অন্যদিকে এর আগেই আলীরটেকের মানুষজন অভিযোগ করেছেন- আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। যে হেফাজতের নানা নাশকতায় সরকারকে বারবার উন্নয়নের মুখে বাধায় পড়তে হয়েছিল সেই হেফাজত ইসলাম চাঙ্গা হয়ে ওঠছে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রার্থী জাকির হোসেনের ছত্রছায়ায়। জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আলীরটেক ইউনিয়ন হবে হেফাজতে ইসলামের ঘাটি। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে জেলা জুড়ে সমালোচনা চলছে হরদম। এরপর ফলে আওয়ামীলীগের রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা আতংকে ওঠলেও জাকির হোসেনের উপর প্রভাবশালীদের ছায়া থাকায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা কেউ। এবার প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
আরো অভিযোগ রযেছে- নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেনের মনোনয়ন দাখিল শেষে জয় বাংলা শ্লোগান না দিয়ে ভিন্ন শ্লোগান দিয়েছেন ওই সময়, যে শ্লোগানটি সাধারণত হেফাজতের নেতাকর্মীরা দেন। ওই শ্লোগানের ভিডিও ফেসবুকেও প্রকাশিত হয়েছে এবং সংবাদকর্মীদের কাছেও সংরক্ষিত রয়েছে। জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিনেও জাকির হোসেনের সঙ্গে ছিলেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান সহ হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা বলছেন- নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থা ছিল এক সময় আলীরটেক ইউনিয়নে। আওয়ামীলীগ ছিল কোণঠাসা। আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা করেছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা সায়েম আহমেদ। অথচ তিনি নৌকা প্রতীক পাননি। কিন্তু নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জাকির হোসেন যিনি কোনোদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতেই ছিলেন না।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টার ছেড়া ও মহাজোটের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর মামলাও রয়েছে।
অন্যদিকে আরও জানাগেছে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন জ্বালানো ও লুটপাটের মামলার আসামি আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে নগরীর পাইকপাড়ার নয়াপাড়া এলাকায় মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চলে৷ নির্বাচনের বানচালের চেষ্টায় সংঘটিত ওই ঘটনায় ২৫ ডিসেম্বর এমপির অনুসারী এনামুল হক রিয়াজ মামলা করেন৷ ওই মামলায় ৭৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়৷ মামলার ৭৪ নম্বর আসামি জাকির হোসেন৷
মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাকিরসহ এজাহারনামীয় ৭৪ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জন আসামি মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পাইকপাড়ার নয়াপাড়া ক্যাম্পে হামলা করে৷ ক্যাম্পের ভেতর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংযুক্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে৷ ক্যাম্পে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়৷ সেই আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন৷ ক্যাম্পে থাকা অডিও প্লেয়ার, মাইক লুট করে আসামিরা৷