বিতর্কিতদের প্রশ্রয়ে বেকায়দায় মান্নান

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ বিএনপি’র অলিখিত নিয়ন্ত্রক এখন আজহারুল ইসলাম মান্নান। যদিও একসময় সোনারগাঁ বিএনপিকে শাসন করতেন সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম ও এরপরে বর্তমান থানা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সংস্কারপন্থী হিসেবে রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রেজাউল করিম। আর দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতি থেকে দূরে আছেন আবু জাফর। এই সুযোগে সোনারগাঁ বিএনপির চূড়ায় উঠে বসতে চাইছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বর্তমান থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান।

বিগত কয়েক বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাছাড়া সোনারগাঁ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক হামলা-মামলা-নির্যাতনে দিশেহারা নেতাকর্মীদের মামলার খরচ এবং পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। চলতি বছরের মামুনুল হক কাণ্ডে সোনারগাঁ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় যেসব বিএনপির নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন, তাদের খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্বও পালন করেছেন মান্নান। তাছাড়া বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন নিয়মিত।

শেষ কয়েক বছরে এতকিছু করার কারণে সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মান্নান। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কর্ণধার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি এবং সেই লক্ষ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বাজেট নিয়ে নেমে পড়েন থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিজের হস্তগত করতে। ইতিমধ্যে নিজের পছন্দ মত লোকদের দিয়ে কমিটি জমা দিয়েছেন মান্নান। আর সেই কমিটির নেতাদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে মান্নানের অর্জন করা জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনাকারী বিতর্কিত বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেনকে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সদস্য সচিব বানাতে চাইছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাছাড়া সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে নজরুল ইসলাম টিটুর নাম, আর টিটুর ছেলে কাজী লিটু স্থানীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাবিত সেলিম হক রুমির ছোট ভাই হানিফ হকও লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। কাঁচপুর বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমিকে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে মরিয়া আজহারুল ইসলাম মান্নান। কিন্তু বিএনপি নেতা সেলিম হক রুমীর বিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই সোনারগাঁয়ে। সেলিম হক রুমীর আপন ছোট ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন আরো দু’বছর আগে। তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এসব কারণে আজারুল ইসলাম মান্নানের সাথে সেলিম হক রুমির মাঝে ছিল বিশাল রাজনৈতিক দূরত্ব। দুজনের মাঝে ছিল রীতিমতো শত্রুতার সম্পর্ক। জাতীয় পার্টির সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলার কারণে সেলিম হক রুমিকে খুব একটা পছন্দ করতেন না মান্নান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোন এক অদৃশ্য ইশারায় পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। শত্রুপক্ষের সেলিম হক হয়ে পড়েন আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রিয়ভাজন। সেলিম হককে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগও করেছেন মান্নান- এমনটাও শুনতে পাওয়া যায়।

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কোনো প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি’র কোনো নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না- এই মর্মে একটি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপির এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আওতাধীন সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রস্তাবিত কমিটির কার্যকরী সদস্য আব্দুর রউফ চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এম এ সালামে্য পক্ষে ভোট চাইছেন আব্দুর রউফ। বিএনপি নেতার নৌকায় ভোট চাওয়ার বিষয়টিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সোনারগাঁ থানা বিএনপিতে। স্থানীয় বিএনপি’র বর্তমান কর্ণধার আজহারুল ইসলাম মান্নানের বলয়ের এই নেতার আওয়ামী লীগ প্রিতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা আর এজন্য আজারুল ইসলাম মান্নানকে দায়ী করছেন তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ