মান্নানের প্রস্তাবিত কমিটির নেতা ভোট চাইছেন নৌকায়!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কোনো প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি’র কোনো নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না- এই মর্মে একটি নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপির এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আওতাধীন সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রস্তাবিত কমিটির কার্যকরী সদস্য আব্দুর রউফ চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এম এ সালামে্য পক্ষে ভোট চাইছেন আব্দুর রউফ। বিএনপি নেতার নৌকায় ভোট চাওয়ার বিষয়টিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সোনারগাঁ থানা বিএনপিতে। স্থানীয় বিএনপি’র বর্তমান কর্ণধার আজহারুল ইসলাম মান্নানের বলয়ের এই নেতার আওয়ামী লীগ প্রিতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা আর এজন্য আজারুল ইসলাম মান্নানকে দায়ী করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নানের আস্থাভাজন ও মান্নানের সমর্থিত প্রস্তাবিত বিএনপি কমিটির সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক প্রার্থী আবদুল জলিলের ভাই আব্দুর রউফ বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সমর্থিত এম, এ সালামের নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন। নৌকার ক্যাম্পে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে তাকে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। যা বিএনপি’র নির্দেশনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আজহারুল ইসলামের মান্নানের প্রশ্রয়েই আব্দুর রউফ এমনটা করছেন বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

জানা যায়, সোনারগাঁ বিএনপিতে এখন একক আধিপত্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নানের। মান্নান চাইছেন তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে সোনারগাঁ বিএনপি’র কমিটি সাজাতে। এ লক্ষ্যে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিনিয়োগও করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর মাধ্যমে সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক পদটি নিশ্চিত করেছেন মান্নান। মান্নানের প্রস্তাবিত থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

স্থানীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনাকারী বিতর্কিত বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেনকে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সদস্য সচিব বানাতে চাইছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাছাড়া সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে নজরুল ইসলাম টিটুর নাম, আর টিটুর ছেলে কাজী লিটু স্থানীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাবিত সেলিম হক রুমির ছোট ভাই হানিফ হকও লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। কাঁচপুর বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমিকে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে মরিয়া আজহারুল ইসলাম মান্নান। কিন্তু বিএনপি নেতা সেলিম হক রুমীর বিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই সোনারগাঁয়ে। সেলিম হক রুমীর আপন ছোট ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন আরো দু’বছর আগে। তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এসব কারণে আজারুল ইসলাম মান্নানের সাথে সেলিম হক রুমির মাঝে ছিল বিশাল রাজনৈতিক দূরত্ব। দুজনের মাঝে ছিল রীতিমতো শত্রুতার সম্পর্ক। জাতীয় পার্টির সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলার কারণে সেলিম হক রুমিকে খুব একটা পছন্দ করতেন না মান্নান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোন এক অদৃশ্য ইশারায় পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। শত্রুপক্ষের সেলিম হক হয়ে পড়েন আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রিয়ভাজন। সেলিম হককে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগও করেছেন মান্নান- এমনটাও শুনতে পাওয়া যায়।

অথচ সেলিম হক রুমির ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকৎ হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে সে সময়ে স্থানীয় সোনারগাঁয়ের একটি অনলাইনকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেছিলেন, যারা বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন, দলের জন্য তাদের কোন অবদান ছিলনা, তারা সংস্কার পন্থী। এসব সংস্কার পন্থীরা সরে গেলে বিএনপির কোন ক্ষতিও হবে না ইনশাহআল্লাহ।

টাকার বিনিময় বিতর্কিত লোকদেরকে কমিটিতে আনার অভ্যাস আজারুল ইসলাম মান্নানের বহু পুরনো। ইতিপূর্বে জেলা বিএনপি’র কমিটি আনার জন্য বিএনপির কমিটি গঠনের কিংমেকার নজরুল ইসলাম আজাদকে ১০ লক্ষ টাকার চেক দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মান্নান। সেই চেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। এবারও থানা বিএনপি গঠনের জন্য বিতর্কিতদের টাকার বিনিময়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন মান্নান। যা কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ