নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার আতাউর রহমান ভুঁঞা। চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদের মনেনায়নপত্র ঘোষণা ইউনিয়নবাসীর মাঝে ছড়িয়ে গেলে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন আলীরটেকবাসী।
২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে নির্বাচনে প্রার্থীদের যাচাই বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। যাচাই বাছাইয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদের মনোনয়নপত্র সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ায় রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষণা করেন।
একই সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্রটিও বৈধ ঘোষণা করা হয়। এদিনও বরাবরের মত জাকির হোসেনের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও হেফাজত নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সহ অনেকেই।
চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সায়েম আহমেদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণায় আলীরটেক ইউনিয়নবাসীর উচ্ছাস প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়নের মানুষের দাবি- চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদ নির্বাচনে না থাকলে এখানে গত নির্বাচনের মতই বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়ে যেতো। সায়েম আহমেদের বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে মতিউর রহমান নৌকা প্রতীক পেলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তীতে জাকির হোসেন নৌকা প্রতীকে ভাগিয়ে আনে। জাকির হোসেনও ছলছাতুরি করে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সায়েম আহমেদকে রুখে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সায়েম আহমেদ এখন পর্যন্ত নির্বাচনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি নির্বাচন ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত মাঠে থাকবেন।
যদি জনগণ পক্ষে না থাকে তাহলে প্রভাবশালীদের আশীর্বাদও কাজে আসেনা, সেটা প্রমাণ হয়ে গেলো আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতির ক্ষেত্রে। সব সময় বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন সবার পূরণ হয়না সেটাও প্রমাণিত হলো। সুতরাং জনগণই যে ক্ষমতার মুল উৎস অন্তত এক্ষেত্রে প্রমাণিত হলো। গতবারের মত এবারের নির্বাচনেও বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আশায় বর্তমান চেয়ারম্যান মতি জনগণের দ্বারে কাছেও যাননি। সেই খেসারত তাকে দিতে হলো ভোটের আগেই পতনের মাধ্যমে।
স্থানীয় জনগণ মতির পক্ষে না থাকায় সরকারি দল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক পেয়েও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হলো মতিউর রহমান মতিকে। নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরেও মতি জনগণকে ডেকে এনেও তার সঙ্গে ভোটের মাঠে নির্বাচনে নামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মতির এমন করুণ পরিস্থিতি প্রভাবশালীরা পর্যবেক্ষণ করে প্রার্থী পরিবর্তন করে মতিউর রহমান মতির নৌকা বাতিল করে সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে এবার বেকায়দায় জাকির হোসেনও।
যদিও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও তার লোকজন দাবি করছেন আলীরটেক ইউনিয়নে জাকির হোসেনের ব্যক্তিগতভাবে ৮০ভাগ ভোট রয়েছে। কিন্তু তাতেও স্বস্থিতে নেই প্রভাবশালীরা। এখন একমাত্র স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদকে সরিয়ে জাকির হোসেনকে বিনা ভোটে নির্বাচিত করার চেষ্টা চলছে। নানা ষড়যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সায়েম আহাম্মেদের লোকজনদের প্রশ্ন- জাকির হোসেনের যদি ৮০ ভাগ ভোটই থাকে তাহলে জাকির বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার চেষ্টা করছেন কেন? আসেন ভোটের মাঠে। সরকারি দলের নৌকা প্রতীক, আবার ৮০ ভাগ ভোট আপনার, তাহলে ভোটের মাঠে ভয় কেনো? জনগণের উপর ছেড়ে দিন দেখা যাক কে বিজয়ী হয়। ১০ বছর আগে জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় বর্তমান জনপ্রিয় চেয়ারম্যান প্রার্থীতো সায়েম আহমেদ কিংবা সায়েম আহমেদের মত কোনো প্রার্থী ছিল না। সুতরাং জাকির হোসেনের ১০ বছর আগের অবস্থা যে বর্তমানে আলীরটেক ইউনিয়নে নেই, সেটা বুঝতে পেরেই এখন জাকির হোসেন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে চান।
আলীরটেকবাসীর আরও দাবি- সায়েম আহমেদ আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসছেন, আর জাকির হোসেন আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে জোর করে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চান। যেভাবে গত নির্বাচনে মতিউর রহমান মতি আলীরটেকবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় মতি ও জাকিরের মধ্যে কোনো প্রার্থনা নাই। তারা জনগণের উপর আস্থা রাখতে পারে না। তারা ক্ষমতা ব্যবহার করে জোর করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে চান।
স্থানীয়রা আরো জানান- গত বছর আলীরটেক ইউনিয়নে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান এক মতবিনিময় সভায় বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকে আবারো সমর্থন ঘোষণা করেন। সেলিম ওসমানের ওই ঘোষণার পর মতি ও তার লোকজন এলাকায় প্রচার করতে থাকেন এবারের নির্বাচনেও মতি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন। এমন প্রচারণার পর আলীরটেক ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহমেদের আহ্বানে নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
একইভাবে তারপর থেকে আলীরটেকের সাধারণ মানুষ, গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা সায়েম আহমেদকে চেয়ারম্যান পদে দেখতে চেয়ে তার প্রচারণায় মাঠে নামেন। কিন্তু ওই সময় আলীরটেকবাসীর পাশে দাঁড়ানো তো দুরের কথা জাকির হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন এমন কথাটা বলারও সাহস দেখাননি। সায়েম আহমেদের আন্দোলনের ফলেই ভোটের আগেই মতির পতন ঘটেছে। এবার জাকির হোসেনের পালা। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে তার প্রমাণ দিবেন বলে জানান।