নারায়ণগঞ্জ মেইল: ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জবাসী একই মুখ দেখে আসছে। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন- এ পর্যন্ত নতুন মেয়র পায়নি নগরবাসী। এবার তাই পরিবর্তন চায় নগরের মানুষ। দেখতে চায় নতুন মুখ। আর নতুনের কেতন উড়িয়ে পরিবর্তনের স্বপ্নযাত্রায় আশার আলো ছড়াচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কিংবদন্তি নেতা প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান। তাকে ঘিরেই এখন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন নগরবাসী।
প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জের গণমানুষের নেতা। তিনি ৪ বার বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যথাক্রমে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তার আসলে উপ নির্বাচনে নির্বাচিত হন সেলিম ওসমান। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনে জাতীয় পার্টির সাংসদ থাকার পরও নেই দলীয় কার্যালয়। তবে নাসিম ওসমান রাজনীতির মাঠে যেমন পারদর্শী ছিলেন তেমন দেশের প্রতি ভালবাসাও ছিল সীমাহীন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নাসিম ওসমান পালিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসে যুদ্ধ করেন মহান এই নেতা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের সকলের সাথে হত্যা করার আগের দিন ১৪ আগস্ট তিনি পারভীন ওসমানকে বিয়ে করেন। বিয়েতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন। ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে নাসিম ওসমান নবপতœীকে ফেলে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি আবার ভারতে চলে যান এবং সেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তৎকালীন কাদের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
মহান এই নেতার মৃত্যুর পর সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাসিম ওসমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই নাসিম ওসমানের মুত্যুর পর ধীরে ধীরে অবহেলিত হতে থাকে তার স্ত্রী পারভীন ওসমান ও পুত্র আজমেরী ওসমান। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার কথা ছিল পারভীন ওসমানের। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে সেটাও হয়নি। পারভীন ওসমানের কোন গতি না হওয়ায় প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের অনুসারিরা দিন দিন হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। তাই আগামী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে পারভীন ওসমানকে ভোট যুদ্ধে নামার আহবান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও। আর পারভীন ওসমান নির্বাচনে অংশ নিলে স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতারা উজ্জীবিত হবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভোট যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পারভীন ওসমানের। কেননা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের বিশাল কর্মীবাহিনী তাকিয়ে আছে পারভীন ওসমানের দিকে।
এব্যাপারে পারভীন ওসমান দৈনিক জানান, নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে অনেকেই আমাকে ফোন করেছে। তবে আমি এখনো এ বিষয়ে চিন্তা করিনি।
সাধারণ মানুষ চাইলে আপনি নির্বাচন করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে পারভীন ওসমান বলেন, সাধারণ মানুষ যদি চায় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নিবো। তবে আপাতত কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
উল্লেখ্য, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর বিভিন্ন ভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে পারভীন ওসমানকে। নানামুখী চাপের পরও ভেঙ্গে পড়েননি তিনি। তাই আগামী নাসিক নির্বাচনে বেশ আলোচনায় রয়েছেন পারভীন ওসমান।