কমিটি বাণিজ্য, তৈমুর-মামুন দ্বন্দ্বে সভা পন্ড

নারায়ণগঞ্জ মেইল: পাঁচটি থানা কমিটি গঠন করতে গিয়ে একের পর এক নাটকের জন্ম দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। নানা জনকে পদ-পদবী দেওয়ার কথা বলে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরে নিজেরাই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এই দ্বন্দ্বের জেরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সভা পন্ড হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলের দিকে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে কমিটি গঠনকল্পে আয়োজিত বৈঠক ছেড়ে এক পর্যায়ে বেরিয়ে চলে আসেন আহ্বান তৈমুর। তিনি বৈঠক ছেড়ে উঠে আসলে আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্য তার সাথে সাথে বৈঠক ছেড়ে চলে আসেন।

এদিকে ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে তৃণমূলের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য ফিরে আসে। একই সাথে তারা অভিযোগ করে বলেন, মামুন মাহমুদ প্রতিটি থানা ও উপজেলাতে নিজের মত করেই কমিটি সাজাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কমিটির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকারকে কোনো রকম পাত্তাই দিচ্ছেন না। এনিয়ে তৃণমূলের মাঝে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ ছিল।

তারা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের শাহ আলম হীরার মা আওয়ামী লীগ নেত্রী, এক ভাই ছাত্রলীগ নেতা আরেক ভাই শ্রমিক লীগ নেতা হওয়ার পরও তাকেই মামুন মাহমুদ সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির সদস্য সচিব করার প্রস্তাব দেন। এতে দুই একজন ছাড়া বাকী সকল সদস্যই বিরোধীতা করেন। কিন্তু তা কোনো ভাবেই কর্ণপাত করছিলেন না মামুন। তিনি তার ইচ্ছে এবং স্বার্থের জন্য শাহ আলম হীরাকেই সদস্য সচিব বানাবেন। এ নিয়ে ঢাকার ৭১ রেস্টুরেন্টে ব্যাপক বাগবিতন্ডা, বিরোধীতা হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। এক পর্যায়ে তৈমূর আলম খন্দকার বৈঠক ছেড়ে উঠে আসেন। এসময় অন্যান্য সদস্যরাও তৈমূর আলমকে সমর্থন করে তার সা‌থে বৈঠক বয়কট করে বেরিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক নেতা জানান, কথা ছিলো সকলের মতামতের ভিত্তিতে সকলকে নিয়ে প্রতিটি কমিটি করা হবে। কিন্তু মামুন মাহমুদ তার মন মতো করে নজরুল ইসলাম আজাদ, শাহ আলম এবং মনিরুজ্জামান মনিরকে সুবিধা দিতে তাদের মত করেই কমিটি ঘোষণা করার প্রস্তুতি নেন। এতে অন্যরা বিরোধীতা করলেও তা কর্ণপাত করেননি মামুন মাহমুদ।

তিনি আরও বলেন, ফতুল্লায় শাহ আলমের ইচ্ছেতে জাহিদ হাসান রোজেলকে আহ্বায়ক এবং নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লাকে সদস্য সচিব ও সিদ্ধিরগঞ্জে আব্দুল হাই রাজুকে আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান শাহ আলম হীরাকে সদস্য সচিব হিসেবে নির্ধারিত করেন। এই দুটি এলাকাতে গিয়াস উদ্দিন ও তৈমূর আলম খন্দকারের কোনো লোককে স্থান দেওয়া হচ্ছে না। সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়া মোশারফ হোসেনকে সদস্য সচিব নির্ধারণ করেন। এখানেও মোশারফকে নিয়ে বিরোধীতা করেন অন্যান্য সদস্যরা। কিন্তু মামুন মাহমুদ এতেও কর্ণপাত করেননি।

অন্যদিকে রূপগঞ্জে কাজি মনিরের লোক অ্যাড. হুমায়নকে আহ্বায়ক এবং নজরুল ইসলাম আজাদের লোক সায়েমকে সদস্য সচিব হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এখানে বাদ দেওয়া হয় তৈমূর আলম খন্দকারের লোকজনকে। আড়াইহাজারে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হচ্ছে নজরুল ইসলাম আজাদের লোককে। এখানে বাদ দেওয়া হয়েছে আতাউর রহমান আঙ্গুর ও মাহমুদর রহমান সুমনের লোকজনকে। এটিও করেছেন মামুন মাহমুদ। এ নিয়ে বিরোধীতা, বিতর্ক ছিলো চরম। কিন্তু তিনি কোনো কথাই শুনেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি আরও জানান, সব কিছুই আধা আধা মেনে নেওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু যার মা আওয়ামী লীগ নেত্রী, ভাই ছাত্রলীগ, আরেক ভাই শ্রমিক লীগের রাজনীতি করেন সেই শাহ আলম হীরাকে কেউই মেনে নিতে পারছিলেন না। ফলে এ নিয়েই চরম বিতন্ডার সৃষ্টি হয় ৭১ রেস্টুরেন্টে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তৈমূর বৈঠক বয়কট করে উঠে আসেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ