নারায়ণগঞ্জ মেইল: শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী মৌসুম। চারিদিকে বাজতে শুরু করেছে নির্বাচনের দামামা। ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সরকারি এই ঘোষণায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। খোরশেদের অবর্তমানে কাউন্সিলর হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে এখন আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন খোরশেদের সুযোগ্য সহধর্মিনী আফরোজা খন্দকার লুনা। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের জনপ্রিয় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এই ওয়ার্ড থেকে পরপর তিনবার কাউন্সিলর পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের আগে খোরশেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর পদে এটাই তার সর্বশেষ নির্বাচন। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিলো। তাই আসন্ন সিটি নির্বাচনের আগে ১৩ নং ওয়ার্ডবাসী মোটামুটি নিশ্চিত যে খোরশেদ আর কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন না।
জানা যায়, ২০০৩ সালে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে নির্বাচন করেন বিএনপি নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকার এর ছোট ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং বিজয়ী হন। এরপর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ভেঙে তৈরি হওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম এবং দ্বিতীয় নির্বাচনেও ১৩ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন এবং সরকারি দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে পিছনে ফেলে বিজয়ী হন। অবশ্য সে বিজয়ের পেছনে সরকারি দলের একটি প্রভাবশালী মহলের সবুজ সংকেতের তথ্যও পাওয়া যায় লোকমুখে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পূর্বে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর পদে এটাই তার শেষ নির্বাচন। এরপর আর তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন না। কাউন্সিলর খোরশেদের নিজ এলাকা মাসদাইরের বায়তুল আমান জামে মসজিদে দাঁড়িয়ে জুমার নামাযের পূর্বে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, “কাউন্সিলর পদে এটাই আমার শেষ নির্বাচন। শেষবারের মতো আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন”। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরেও একই মসজিদে জুমার নামাজের পরে দাঁড়িয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেছিলেন, “আমি কাউন্সিলর পদে আর নির্বাচন করবো না। এতদিন ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলো আপনাদের এলাকায়। আগামীতেও যাতে এলাকার কেউ কাউন্সিলর হতে পারে সে লক্ষ্যে আপনারা প্রস্তুতি নিন এবং দক্ষ কাউকে মনোনীত করুন যাতে আমি আগামী দিনের কাউন্সিলর হিসেবে তাকে গড়ে তুলতে পারি”।
কাউন্সিলর খোরশেদের এ ঘোষণায় সবাই সেসময় মনে করেছিলো হয়তো মেয়র পদে নির্বাচনের ইচ্ছা আছে খোরশেদের। সর্বশেষ করোনার গত দেড় বছরে জনস্বার্থে খোরশেদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড লোকের সে ভাবনাকে আরও মজবুত করেছিল। হয়তো সবাই মনে করেছিলো ধীরে ধীরে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দিকে খোরশেদ এড়িয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু বিধিবাম! খোরশেদের মেয়র পদে নির্বাচনের আশা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায়। জনৈক সায়েদা শিউলি নামক এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় খোরশেদের ইমেজ কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় চলে আসে। শিউলির দায়ের করা মামলার আসামী হয়ে চার মাস যাবত ফেরারী থাকায় খোরশেদ হয়ে পড়েছেন জনবিচ্ছিন্ন।
জনৈক সায়েদা শিউলির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চার মাস ফেরারি থাকার পরে গত ২৩ আগষ্ট জামিন নিয়ে বাড়িতে ফেরেন কাউন্সিলর খোরশেদ। কিন্তু বাড়ি ফেরার ঠিক পরের দিনই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন জনৈক এক নারী। মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। ফলে মেয়র নির্বাচনতো দূরে থাক, কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়াটাই এখন খোরশেদের জন্য দুরূহ হয়ে গেছে। তাছাড়া বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না- এরকম ঘোষণায় খোরশেদের মেয়র নির্বাচনের স্বপ্নটাও ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন না আর মেয়র পদেও করতে পারছেন না।
এদিকে খোরশেদ ফেরারি থাকায় খোরশেদের অবর্তমানে “টিম খোরশেদ” এর যাবতীয় কার্যক্রম চলমান রেখেছিলেন খোরশেদের সহধর্মিনী আফরোজা খন্দকার লুনা। নিজ দক্ষতায় স্বামীর অনুপস্থিতি কাউকে কখনো বুঝতে দেননি তিনি। তার সুনিপুণ পরিচালনায় “টিম খোরশেদ” তার যাবতীয় কার্যাবলী অক্ষুন্ন রেখেছিলো। লাশ দাফন, অক্সিজেন সেবা, অসহায়দের খাদ্য বিতরণ, ঈদে পথশিশুদের নতুন জামা উপহার দেয়াসহ নানা জনহিতকর কাজে সুনিপুণ দক্ষতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন খোরশেদ পত্নী লুনা। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় স্বামীর মতোই ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি আর তাই এলাকাবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। ১৩ নং ওয়ার্ডবাসী মনে করছেন খোরশেদ যদি নির্বাচন করতে না পারেন তবে এই আসনে খোরশেদের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনার কোন বিকল্প নেই। তাই আসন্ন নির্বাচনে লুনাকেই কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় এলাকাবাসী, এমনটাই জানিয়েছেন তারা।