নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সরকারি এই ঘোষণায় অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ থেকে এবারও নৌকার প্রধান দাবিদার বর্তমান মেয়র ডা সেলিনা হায়াৎ আইভী। তবে আইভীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র নির্বাচনে না আসার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ইতিমধ্যেই বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ছাড়াই এবারের সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রে প্রকাশ, বহুল আলোচিত সমালোচিত প্রথম নাসিক নির্বাচনে বিএনপি’র ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ২০১১ সালের নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেয়া হয়েছিল না’গঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা একেএম শামীম ওসমানকে। পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেন তৎকালীন পৌর মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী। আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপি থেকে সমর্থন দেয়া হয় অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে। আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগ হলেও বিএনপি’র ভোট বাক্স ছিলো একটি। তাই মেয়র হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল বিএনপির সামনে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপি’র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে বসিয়ে দিয়ে বিনা বাধায় মাঠ ছেড়ে দেয় বিএনপি।
২০১৬ সালে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী দেয়া হয় সেলিনা হায়াত আইভীকে। আইভীর বিপক্ষে বিএনপির প্রার্থী হতে চাননি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রভাবশালী কোনো নেতাই। প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আইভীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আইভীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে রাজি হন এবং নির্বাচনের মাঠে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বুক চিতিয়ে লড়াই করেন। নির্বাচনে যদিও তিনি পরাজিত হন তবে সে নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র সিনিয়র অনেক নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। যেটা পরবর্তীতে দৃশ্যমান হয়েছিল।
আসন্ন তৃতীয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে যদি দলীয় সিদ্ধান্ত বদল হয় তবে তৃণমূলের প্রথম পছন্দ গত নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকেই। কারণ তিনি সকল ভয় ডর উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোটের সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপি দলীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার। সে ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শতবার শ্রদ্ধাশীল দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অবকাশ নাই। তবে দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। আমি মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করি তৃণমূলের সাথে নিয়ে। করোনাকালীন সময়েও আমি মাঠে ছিলাম। তাই আমি দলীয় মনোনয়ন চাইবো। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচনে অংশ নেবো।
এছাড়াও বিএনপি থেকে আরও একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে দুই বিতর্কিত বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল ও আবু ইউসুফ খান টিপু অন্যতম। গুঞ্জন আছে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না দেয়া হলেও স্বতন্ত্র থেকে আওয়ামী লীগের ড্যামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন মুকুল। মুকুল এর বিরুদ্ধে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ধানের শীষের এজেন্টদেরকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি বিএনপি’র সাইনবোর্ডের সরকারি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে আসেন সাবেক পৌর পিতা আলী আহমদ চুনকার কন্যা সেলিনা হায়াৎ আইভী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জে জোর প্রচারণা চালান দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। বিএনপির প্রার্থী নুরুল ইসলাম সরদারকে হারিয়ে শুরু হয় পৌর চেয়ারম্যানের পথ চলা। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেলেও একচুল পিছু হটেনি আইভী। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শামীম ওসমানের মত প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে। সবশেষ ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ধানের শীষের সাখাওয়াত হোসেন খানকে , হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। তবে এবার তার ভাগ্যে জুটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক।